মালদহে সরকারি বাসে উঠতে ভিড়। বুধবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে বুধবার দিনভর নাকাল হলেন মালদহের ইংরেজবাজার শহরের মানুষ। পথে বে়রিয়ে যানবাহনের অভাবে ভোগান্তি চলে গোটা দিন। দোকানপাট বন্ধ থাকাতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। আচমকা বন্ধে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
‘পুলিশি সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে এদিন শহর জুড়ে ১২ ঘন্টা বনধের ডাক দেয় বামফ্রন্ট। সকাল ৬টা থেকে বনধের সমর্থনে রাস্তায় নেমে পড়েন বাম নেতা কর্মীরা। পুরভোটের আগে শহর জুড়ে মিছিল শুরু হয়। অন্যদিকে, তৃণমূল কর্মীরাও বনধের বিরোধিতায় রাস্তায় নামেন।
ফলে ঝুঁকি না নিয়ে পয়লা বৈশাখের মুখে সপ্তাহের মাঝখানের একটা দিন দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। শহরের কয়েকজন কাপড়ের ব্যবসায়ী জানান, চৈত্র সেল চলছে। রোজ দোকানে ভিড় হচ্ছে। একদিন দোকান বন্ধ রাখা মানে হাজার হাজার টাকা লোকসান। যে কোনও দল কিছু হলেই হুটহাট বনধ ডাকে। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা কেউ ভাবেন না।
রাস্তায় যানবাহন না থাকায় এদিন সকাল থেকে ইংরেজবাজার শহরের রথবাড়ি মোড়, সুকান্ত মোড়, হাসপাতাল মোড় এলাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাস্তায় বেসকারি বাস যেমন নজরে আসেনি, তেমন চোখে পড়েনি ম্যাক্সি ট্যাক্সি ও ছোট গাড়িও। তবে বিভিন্ন রুটে সরকারি বাস চলাচল করেছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তাই স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ও অফিস যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি অসুস্থ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে রোগীর আত্মীয়দের। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হবিবপুরের বাসিন্দা ছোটন লালা বলেন, ‘‘আমার আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এদিনই তাঁকে ছুটি দিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় বেরিয়ে হয়ে জানতে পারি গাড়ি চলছে না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি যেতে হয়েছে।’’
কর্মীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত ১০ টা নাগাদ বন্ধ ডাকে বামফ্রন্ট। ১০টার পর তারা শহর জুড়ে মাইক নিয়ে প্রচার করে। ফলে অনেক মানুষই বন্ধ ডাকা হয়েছে বলে জানতে পারেননি।। বিশেষ করে শহরের বাইরে বাসিন্দারা। প্রতিদিন ইংরেজবাজার শহরে নানা কাজে গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন। ফলে রাস্তায় বার হয়ে তাঁদেরকে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। এদিনের বনধে শুধু বড় গাড়িই নয়, শহরে মধ্যে চলা রিকশা্, অটো, টোটো চলাচলের হার ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম। টাউন স্টেশনে রিকশার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। টাউন স্টেশনে দাঁড়িয়ে শিলিগুড়ি থেকে আসা এক মহিলা যাত্রী সুপর্ণা শর্মা বলেন, ‘‘ইংরেজবাজারের কতুবপুরে যাওয়ার জন্য একমাত্র রিকশা ভরসা। ঘন্টা খানেক ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। মানুষকে সমস্যায় ফেলে বন্ধ করা ঠিক নয়।’’
বামেদের বনধ নিয়ে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজার পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘তিন দশকে বামফ্রন্ট রাজ্যকে শেষ করে দিয়েছে। আর এখনও বনধ করে মানুষকে সমস্যায় ফেলছে। এর জবাব মানুষ তাদের দেবে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র পাল্টা বলেন, ‘‘এদিনের বনধ মানুষ নিজেই সমর্থন করেছেন। কারণ তৃণমূল পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস করেছে। তাতে মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই এদিনের বনধ সফল হয়েছে। মানুষ আমাদের পাশে থাকায় আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিছু মানুষের সমস্যা ঠিকই হয়েছে। তার জন্য আমরা খুবই দুঃখিত।’’