অবরোধ: কড়া ব্যবস্থার দাবিতে রাস্তা জুড়ে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
কুমারগঞ্জে যুবতী খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়িতে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক বাসিন্দা। জাতীয় সড়কের উপরে বসে বাসিন্দারা দাবি করেন, অভিযুক্তদের ফাঁসি দিতে হবে। অবরোধ চলাকালীনই ঘটনাস্থলে যায় বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তারপরেই এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল বিজেপি তরজা শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত সোমবার তরুণীর দেহ উদ্ধার হতেই রাতে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তে স্থানীয় বাসিন্দারা রাতেই রাস্তা অবরোধের ডাক দেন। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে এই বিক্ষোভে শামিল হতে আহ্বান জানানোয় সকাল থেকে প্রচুর মানুষ নির্যাতিতার গ্রামে জমায়েত হন। সেখান থেকে দলে দলে স্থানীয় বাসিন্দারা ফুলবাড়িতে এসে রাস্তা অবরোধ করেন।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে। জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েন। অনেক গাড়ি রামপুর দিয়ে তপন হয়ে গঙ্গারামপুরে ওঠে গন্তব্যস্থলে পৌঁছয়। প্রায় তিরিশ কিমি ঘুর পথে যাতায়াত করার স্বাভাবিক ভাবেই নিত্যযাত্রীরা হয়রানির শিকার হন।
এ দিকে, বিক্ষোভস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি সাংসদ। তারপরে সেখান থেকে নির্যাতিতার বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এরপরেই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে সাংসদ বলেন, ‘‘এই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নেই। মেয়েরা নিরাপদ নয়। কিছুদিন আগে গঙ্গারামপুরে এমনই নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল এক যুবতীকে। অথচ হুঁশ নেই রাজ্য সরকারের।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কুমারগঞ্জে দেড় দিন ধরে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এমন ঘটনা হয়দরাবাদের ঘটনার চেয়েও মারাত্মক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রসমাজ এবং বুদ্ধিজীবীরা কেন নীরব?’’ দিলীপবাবুর এই বক্তব্যে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষের মন্তব্য, ‘‘একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে। এটা খুবই খারাপ কাজ করছে বিজেপি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই নির্যাতিতার পরিবারের পাশে আমরা রয়েছি। এখন দেশব্যাপী বিজেপি বিরোধিতা থেকে নজর ঘোরানোর জন্য ওই জলের নেতারা এই সব কথা বলছেন।’’ জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, ‘‘ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্তের পরেই বোঝা যাবে।’’
অর্পিতা বালুরঘাটে মর্গে গিয়ে নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল এদিন নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে দেখা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর সঙ্গে অভিযুক্ত এক যুবকের পরিচয় ছিল। ঘটনার দিন তরুণীর সঙ্গে তিন জন মিলিত হয়। এরপর অত্যাচার করে খুন ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সমেত মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বাজারে চাদর কিনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রবিবার দুপুরের পর নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ওই তরুণী। পর দিন, সোমবার সকালে বাড়ি থেকে ৮ কিলেমিটার দূরে কালভার্টের নীচে সম্পূর্ণ দগ্ধ অবস্থায় তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার হলে জেলা জুড়ে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ফুলবাড়ি এলাকায় বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তরুণীকে দোকানে চাদর কিনতে দেখা যায়। সঙ্গে থাকা মূল অভিযুক্তকেও তার পাশে দেখা গিয়েছে। এরপর ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুন ও প্রমাণ লোপাটের জন্য জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, যে চুরিটি দিয়ে ওই তরুণীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে, সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এ দিন ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ৩৭৬ (গণধর্ষণ), ৩০২ (খুন) ও ২০১ (প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা) ধারায় মামলা দায়ের করে বালুরঘাট আদালতে পাঠায়। তিন যুবককে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
বিজেপির জেলা নেতা নীলাঞ্জন রায় এই ঘটনায় ফরেন্সিক তদন্তের দাবি করেছেন।