প্রতীকী ছবি।
মিথিলেশ মাহাতো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করছেন। ফুচকা খেতে দাঁড়িয়ে তিন জন। বিক্রেতা, খদ্দের কারও মুখে মাস্ক নেই।
মাস্ক নেই কেন? জিজ্ঞাসা করতেই মুখ থেকে গুটখা থু থু করে রাস্তার ধারে ফেলে ফুচকার ঠেলায় একদিকে গুঁজে রাখা মাস্ক বার করে পরে নেন মিথিলেশ।
মিষ্টির দোকানে খদ্দের যাতে দূরত্ব বজায় রাখেন, সে জন্য মালিক ভগীরথপ্রসাদ গুপ্ত সামনে দড়ি টাঙিয়েছেন। লেখা ‘কিপ ডিসটেন্স’। কে শোনে সে কথা, খদ্দেরদের একাংশ দড়ির নীচ দিয়ে গলে দোকানে ঢুকছেন অনেকে। কিছু বলছেন না? দোকানির জবাব, ‘‘লোকে শুধু বলে, লকডাউন উঠে গিয়েছে। করোনাও আর নেই। বলেই দোকানে ঢুকে পড়ছে। খদ্দেরকে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’’ দোকানদারের মুখে মাস্ক নেই কেন? বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময় পরে থাকলে অসুবিধা হয়। তাই খুলে রেখেছি।’’
অভিজিৎ দত্তের স্টেশনারি দোকানের সামনে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড। কিন্তু কেউই বাঁশের বাধা মানছেন না। পাশের সামান্য ফাঁকা জায়গা দিয়ে দোকানে ঢুকে পড়েছেন। দোকানদার বা খদ্দের, কারও মুখে মাস্ক নেই। রাস্তার ধারে আলু, পেঁয়াজের দোকান দিয়েছেন মহম্মদ রাজু, লক্ষ্মী দাসেরা। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার তাঁদেরও নেই।
শিলিগুড়ির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে করোনার প্রকোপ সব চেয়ে বেশি, সেখানকার চিত্র এমনই। চম্পাসারি মোড় থেকে চম্পাসারি মেন রোড ধরে এগোলেই দেখা যাবে, মাস্ক ছাড়া লোকজন আবাধে ঘুরছে। আনাজের দোকানে থেকে চায়ের দোকান, আড্ডা ও মাস্কহীন ভিড়ই মূল দৃশ্য। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে বাসিন্দাদের অনেকেরই। স্থানীয় কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্ত কিছু দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন সুস্থ। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ সচেতন না হলে খুবই মুশকিল। পুলিশ, প্রশাসনের তরফে কোনও নজরদারি নেই। প্রশাসনকে আগেও জানিয়েছি। আবার জানাব। এমন হলে তো বিপদ বাড়বেই।’’ মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই ওয়ার্ডে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার। সেখানকার মাছের আড়ত থেকে শুরুতে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল বলে অভিযোগ। সংক্রমণ রুখতে একাধিকবার বাজার বন্ধ করা হয়েছে। অথচ এখনও দোকানদার থেকে খদ্দের, বেশিরভাগই স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করেন না বা মাস্ক পরেন না বলে দাবি। পণ্য নিয়ে বাইরে থেকে প্রচুর গাড়ি ঢুকছে। সেগুলিও ঠিকমতো স্যানিটাইজ় করা হয় না বলে অভিযোগ। যদিও মার্কেট কমিটির দাবি, তাঁরা স্যানিটাইজ় করছেন। লাগোয়া একটি পেট্রল পাম্পের ম্যানেজার সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পুরসভার একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওয়ার্ড়ে দেড়শো জনের বেশি আক্রান্ত। মারা গিয়েছেন অন্তত ৫ জন। সংক্রমণ রুখতে ওয়ার্ডে পুরসভার একটি হেল্থ পোস্টে লালা সংগ্রহের ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানেও ভিড়!
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)