— প্রতীকী চিত্র।
গোটা জীবনই পানীয় জল কিনে খেয়েছেন কল্পনা দাস। কল্পনা খাস আলিপুরদুয়ার শহরের বাসিন্দা। পড়শি বাড়িগুলিতেও একই হাল। এখন আবার কেউ কেউ বাড়িতে বসিয়ে নিয়েছেন জল পরিশোধনের যন্ত্র। পাম্প দিয়ে মাটির তলা থেকে জল তুলে বা রাস্তার টিউওয়েলের জল বাড়িতে এনে চলছে নিত্যদিনের কাজকর্ম। আর খাওয়ার বেলায় সেই বোতলের কেনা জল। পুরসভা গঠনের পরে ৬৭ বছর পার হলেও, আজ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে আলিপুরদুয়ার শহরের কোনও বাড়িতে পৌঁছয়নি পরিশ্রুত পানীয় জল। বছর সত্তরের কল্পনার আফসোস, “জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে, এখনও পানীয় জল কিনে খেতে হয়।”
অথচ, মাস কয়েক আগেই নবান্নে এক বৈঠকে রাজ্যের একাধিক এলাকার বাড়ি-বাড়ি জল প্রকল্প নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়ে আলিপুরদুয়ার শহরের নাম শুরুতেই উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, তার পরেও উত্তরের এই শহর হাঁটছে শম্বুক গতিতে। নোনাই নদীর জল সংগ্রহ করে রাখার জন্য পাঁচটি জলাধার তৈরির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি। কিন্তু সেই জল বাড়ি-বাড়ি পৌঁছনোর জন্য পাইপ এখনও বসেনি।
আলিপুরদুয়ারের পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, গোটা শহরকে পাঁচটি জ়োনে ভাগ করে রাস্তায় মূল পাইপ লাইন পাতার কাজ জোর কদমে চলছে। পুরসভা সূত্রের খবর, পাঁচটি জ়োনের মধ্যে মাত্র দুটি জ়োনেই সেই কাজ অনেকটা এগিয়েছে। আরও দুটি জ়োনে অতি সম্প্রতি এই কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থাকে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে। বাকি থাকা আর একটি জ়োনের টেন্ডার-প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। ফলে, ছ’দশকেরও আগে তৈরি হওয়া আলিপুরদুয়ার শহরের বাসিন্দারা কবে বাড়িতে পানীয় জল পাবেন, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। শহরের বাসিন্দা রাজু রায়ের কথায়, “অনেক দিন ধরে শুনছি, বাড়ি-বাড়ি জল আসবে। কোথায়, কী? কেনা জলই আমাদের ভরসা। জল খেতেও টাকা খরচ করতে হচ্ছে।”
আলিপুরদুয়ার পুর এলাকার বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজে তিনি যে খুশি নন, নবান্নে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠক থেকে পানীয় জল প্রকল্পে সব চেয়ে খারাপ কাজ হচ্ছে বলে রাজ্যের যে পাঁচটি পুরসভার নাম মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে প্রথম নামটিই ছিল আলিপুরদুয়ারের। অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগে বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল প্রকল্প চালু না হওয়ায়, শহরের বড় অংশের মানুষকে জল কিনতে হচ্ছে। সে জলের গুণমান নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু উপায় নেই বাসিন্দাদের। আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার পাশে পিএইচই বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ট্যাপ রয়েছে। সেখান থেকেও পানীয় জল সংগ্রহ করেন অনেকে। আলিপুরদুয়ার পুরসভার পুরপ্রধান প্রসেনজিৎ কর অবশ্য বলেন, “শহরে বাড়ি-বাড়ি জল প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে গোটা শহরে প্রতি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে যাবে।” যদিও শহরের প্রবীণ বাসিন্দা কল্পনার আক্ষেপ, ‘‘এমন কথা আগেও শুনেছি। কাজের কাজ হচ্ছে কোথায়?’’