উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে হুইল চেয়ার থেকে পড়ে রোগিণীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল সুপার-সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করার জন্য শিলিগুড়ি পুলিশকে নির্দেশ দিল আদালত।
বুধবার দুপুরে মৃতার পরিবারের লোকজনের করা আবেদনের ভিত্তিতে শিলিগুড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন মৌলিক ওই নির্দেশ দিয়েছেন। গত বছর ২৬ ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানির বাসিন্দা রোগিণী মাধবী শর্মাকে প্রসবের পরেরদিন ওয়ার্ড থেকে হুইল চেয়ারে করে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর্মীর অসতর্কতার তিনি হুইল চেয়ার থেকে পড়ে যান বলে অভিযোগ। এর পরে রোগিণী মেডিক্যাল কলেজেই মারা যান।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতি এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবেই মাধবীর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় সুপার-সহ অন্য কর্মীরা ময়নাতদন্ত না-করিয়ে দোষীদের শাস্তি হবে বলে দেহটি সৎকারের জন্য নিয়ে যেতে কার্যত বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ। পরবর্তীতে পরিবারের লোকই ময়নাতদন্ত করাতে চাননি বলে চাউর করে দেওয়া হয়। মৃতার শ্বশুর কৃপানাথ শর্মার দাবি, ‘‘মাধবীর শারীরিক পরিস্থিতি অবনতির খবর ঠিকঠাক মেডিক্যাল কলেজ কতৃর্পক্ষ জানাননি। যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। হুইল চেয়ার থেকে পড়ে মাধবী আহত হয়েছিলেন। পুলিশ কমিশনারেটে, হাসপাতাল সুপারকে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তাতে কাজ না-হওয়ায় আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
মাধবীর পরিবারের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘কর্তব্যে গফিলতিতে মৃত্যুর ধারায় মামলা করা ছাড়াও ওই সময় প্রয়োজনীয় যে নথি তৈরি করা উচিত ছিল তাও মেডিক্যাল কলেজ কতৃর্পক্ষ করেননি বলে অভিযোগ। সব কিছুই মাটিগাড়া থানার পুলিশকে দেখে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা’র দাবি, ‘‘অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গড়ে ঘটনা খতিয়ে দেখা হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করতে হবে তা পরিবারের লোকদেরও জানানো হয়েছিল। ওঁরাই রাজি হননি।’’ আর পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে তা মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘটনার একটি তদন্ত রিপোর্ট রয়েছে। তাতে বলা হয়েছিল রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হওযায় দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার দরকার ছিল। সে জন্য ওয়ার্ডে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী তাঁকে হুইল চেয়ারে করে লেবার ওয়ার্ডে থাকা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় হুইল চেয়ার থেকে ‘স্লিপ’ করে রোগিণী পড়ে যাচ্ছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যরা এসে তাঁকে ধরে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। পরে ফুসফুসে রক্ত জমাট বাধার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। সিজার করে প্রসবের পর অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। একে ‘পালমোনারি এমবলিসম’ বা ফুসফুসে আচমকা রক্ত জমাট বাধা বলা হয়। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। রোগিণীর চিকিৎসা ঠিকঠাক চলছিল। ঘটনার আগের দিন তিনি একটি কন্যা সন্তানেরও জন্ম দিয়েছিলেন।
ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছিল, অসুস্থ রোগিণীকে দেখার জন্য চিকিৎসককে কলবুক পাঠানো হল না কেন? শ্বাসকষ্ট এবং গুরুতর অসুস্থ ওই রোগিণীকে ট্রলি করে নিয়ে যাওয়ার কথা। পরিবর্তে হুইল চেয়ারে করে তাঁকে নিয়ে য়াওয়া হচ্ছিল কেন? তা ছাড়া ট্রলিতে করে স্বাস্থ্য কর্মীদের নেওয়ার কথা। তাঁদের কেউ ছিলেন না কেন? আয়ারা হাসপাতালের কর্মী নন। তাঁদের দিয়ে রোগিণীকে পাঠানো হচ্ছিল বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল। তবে বিষয়গুলি নিয়ে সুপার কোনও মন্তব্যই করতে চাননি।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে প্রসূতি ঠিক রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল। পরে অবস্থা খারাপ হলে তড়িঘড়ি লেবার রুমে নেওয়া ছাড়াও কোনও সঠিক চিকিৎসাই করা হয়নি। এমনকি, মাধবী পড়ে যাওয়ার ঘটনা তাঁর স্বামী নিজেই দেখেছেন। তিনি ধরতে গেলে নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে ঢুকতে দেননি বলে অভিযোগ।