আহত সিভিক ভলান্টিয়ার।নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরে হামলায় তিন মহিলা-সহ এক সিভিল ভলান্টিয়ারের জখম হওয়ার ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের নন্দনপুর। সোমবার সকালে সংঘর্ষ ও বোমাবাজির অভিযোগ তুলে এলাকার মহিলারা পথ অবরোধে নামলে পুলিশের সামনেই তাদের সমর্থক লোকজনকে মারধর করা হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। জখম পুলিশের গাড়ির চালক ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সেলিম রেজা-সহ তিন মহিলাকে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা করাতে হয়েছে আরও দুই তৃণমূল সমর্থককে। গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘সকালে মারামারির একটি ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে গেলে এক পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের মাথায় আঘাত লাগে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে এলাকায় অভিযান চলছে।’’
মাত্র দিন চারেক আগে ওই এলাকার তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি তথা স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নুরুল ইসলাম জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি এলাকায় ফিরতেই ফের গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছে বলে গঙ্গারামপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সত্যেন রায় অভিযোগ করেছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, সিপিএমের লোকজনকে নিয়ে নুরুলের অনুগামীরা এলাকায় ফের অশান্তি শুরু করেছে। সত্যেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের শহীদ দিবস পালন অনুষ্ঠানের জন্য দলীয়স্তরে প্রস্তুতিতে রবিবার নন্দনপুর এলাকায় প্রচার ও পথসভা হয়। এলাকার মানুষকে সন্ত্রস্ত করতে এ দিন সকাল মারামারি ও বোমাবাজি হয়েছে।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, শহিদ দিবসকে সামনে রেখে রবিবার নন্দনপুর এলাকায় সোনা পাল-সহ সত্যেন অনুগামী নেতারা সভা করেন। নুরুল গোষ্ঠীর কর্মী সমর্থকেরা পাল্টা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেন বলে অভিযোগ। এলাকার তৃণমূল নেতা তথা আইএনটিটিইউসির প্রাক্তন জেলা সভাপতি মজিরুদ্দিন মন্ডলের অভিযোগ, সকালে নাগন এলাকার এক দলীয় সমর্থককে রতনপুর এলাকায় ধরে নুরুলের লোকজন মারধর করে। এরপরই পাল্টা মজিরুদ্দিন মন্ডলের লোকজনের হামলার অভিযোগের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সংঘর্ষ, নেতার গাড়ি লক্ষ করে গুলি এবং বোমাবাজি এবং বাড়ি ভাঙচূরের ঘটনা ঘটেছিল নন্দনপুরে। এমনকী, প্রচারে গিয়ে প্রার্থী সত্যেনবাবুর মিছিলের উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে। তখনও অভিযোগের তির ওঠে বিপ্লব মিত্র অনুগামী নেতা নুরুলের বিরুদ্ধে। ভোটে হেরে যান সত্যেনবাবু। এরপর মজুত বোমা সরাতে গিয়ে ফেটে নুরুল মারাত্মক জখম হন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ দিনের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুল বলেন, ‘‘আমি এলাকাতেই নেই। মিথ্যা হামলার অভিযোগ তুলে মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতারের কৌশল নিয়েছে সত্যেনবাবুরা। পঞ্চায়েতে কর্তৃত্ব দখল তাদের আসল উদ্দেশ্য।’’
এ দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের সত্যেনবাবু ওই এলাকা থেকে ২০০০ ভোটে পিছিয়ে থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেনই। তার উপর নন্দনপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান নুরুল ইসলামের কর্তৃত্ব খর্ব করে পাল্টা দখলে ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এলাকা দখলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।’’ বালুরঘাটের তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘যারাই জড়িত থাকুন না কেন, রাজনীতির রং না দেখে কড়া আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি। রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।’’