ট্রেজারি মোড় থেকে আরএসপি-র হোর্ডিং খুলে ফেলা হচ্ছে (বাঁ দিকে)। বাতিস্তম্ভে সুভাষপল্লি এলাকায় তৃণমূলের এবং ঘুঘুমালি এলাকায় বিজেপি-র ভোট প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের নির্বাচনী আচরণ বিধির নজরদারির জন্য গড়া মডেল কোড অব কন্ডাক্ট বা এমসিসি ‘সেল’-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলল বাম শরিক আরএসপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে এমএসিসি স্কোয়াডের সদস্যরা শিলিগুড়ি ট্রেজারি ভবনের দেওয়াল থেকে আরএসপি-র জেলা সম্মেলনের প্রচারের একটি বড় মাপের ফ্লেক্স খুলে ফেলেন। আদালত চত্বরের পাশের ওই ফ্লেক্সটি খোলার পরেই আরএসপি-র তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক তাপস গোস্বামীর অভিযোগ, “আমরা ওই ফ্লেক্সে কোনও ভোটের প্রচার করিনি। আমাদের জেলা সম্মেলনের প্রচার করা হয়েছিল মাত্র। পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এ অভিযোগ ইচ্ছাকৃত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মনে হচ্ছে।” এ দিকে শহর জুড়ে রাজ্য সরকার, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে শুরু করে নানা দলের প্রচারের হোর্ডিং, ফ্লেক্স কেন এমসিসি স্কোয়াডের সদস্যদের নজরে পড়ছে না, তা নিয়েও তাপসবাবু সন্দেহ প্রকাশ করেন। প্রয়োজনে তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর প্রসঙ্গও তোলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ মার্চ কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম হলে আরএসপি-র জেলা সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা, দলের রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর। সে বিষয়েই শহরের বিভিন্ন মোড়ে ফ্লেক্স ঝুলিয়েছে দল। ট্রেজারির দেওয়াল থেকে ফ্লেক্সটি খুলে নেওয়া হলেও গোষ্ঠ পাল মূর্তির পাশ থেকে ফ্লেক্সটি অবশ্য খোলেননি এমসিসি স্কোয়াডের সদস্যরা। যদিও পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “কোনও পক্ষপাতের বিষয় নেই। আমরা প্রথমে সরকারি ভবন, দেওয়াল দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাতে কোনও রাজনৈতিক প্রচার থাকবে না। তার পরে বেসরকারি ক্ষেত্র বা ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন, বাড়ি দেখব। সেই সঙ্গে সরকারি প্রকল্পের খতিয়ান, প্রচার সম্বলিত হোর্ডিং, ফ্লেক্স সরানো হবে।” মহকুমা শাসক জানান, সবে তিন দিন হল কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে কমিশনের নির্দেশ পুরোপুরি লাগু করা হবে।
এ দিনও পুরসভার মহানন্দা সেতু লাগোয়া নবীন সেন রোডে দেখা গিয়েছে একাধিক বিদ্যুতের খুঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে প্রার্থীর ভোট প্রচারের হোর্ডিং। সামান্য দূরের পানিট্যাঙ্কি মোড়ের বিদ্যুতের বাতিস্তম্ভে তৃণমূল প্রভাবিত কমর্চারী সংগঠনের সভার প্রচার। একটু এগিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের দেওয়ালে রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে কন্যাশ্রীর হোর্ডিং। আবার কলেজ মোড়, চিলড্রেন্স পার্ক বা কলেজ লাগোয়া পার্ক মোড়ে রাজ্য সরকারের প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরা একাধিক বড় মাপের হোর্ডিং রয়েছে।
হিলকার্ট রোডের ব্যস্ততম এলাকা হাসমি চক। বিদ্যুতের খুঁটিকেই ব্যবহার করে কংগ্রেসের প্রচারের বড় ফ্লেক্স। একই ভাবে নিউ সিনেমা রোড লাগোয়া বিদ্যুতের খুঁটিকে ব্যবহার করেই সিপিএমের প্রার্থীর প্রচারের বিরাট ব্যানারও দেখা গিয়েছে। আবার থানা মোড়, ঝংকার মোড়, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে যেমন দেখা দিয়েছে বিজেপির প্রচারপ্রত্র, তেমনিই রাজ্য সরকারের খতিয়ান বা স্থানীয় বিধায়কের বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ শিবিরের বিজ্ঞাপনও। এমনকি, বর্ধমান রোডের নির্মীয়মাণ যাত্রী স্টপেজের সঙ্গেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তৃণমূলের হোর্ডিংও দেখা গিয়েছে।
গত ১৮ জানুয়ারি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে শিলিগুড়ি পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচনী আচরণ বিধি জারি করা হয়েছে। সেখানে সরকারি প্রচারমূলক বিজ্ঞাপন সরানো-সহ একাধিক সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। আচরণ বিধির নজরদারির জন্য তৈরি করা হয়েছে মডেল কোড অব কন্ডাক্টের দল বা এমসিসি স্কোয়াডও। এমসিসি স্কোয়াডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বীরবিক্রম রাই অবশ্য বলেন, “আমরা কিছু ট্রেজারি মোড়, মহকুমা পরিষদ এলাকা থেকে হোর্ডিং সরিয়েছি। বিভিন্ন এলাকার ছবি তোলা হচ্ছে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। তারা নিজেরা ব্যবস্থা নিলে ভাল, না হলে আমরা সব সরিয়ে দেব।”