আতঙ্ক: ট্রেন দুর্ঘটনার পরে উদ্ধার কাজে এসে ভয়ার্ত পুলিশকর্মীই। ১৯৯৯ সালে গাইসালে। ফাইল চিত্র
রাতে খবর দেখে ঘুমোনোর সময় চোখ বুজতে পারছিলেন না গাইসাল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী সাব্বির আহমেদ। তিনি আবার পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্যও। কানে বাজছিল ২৩ বছর আগে গাইসালে ট্রেন দুর্ঘটনার সময়ে যাত্রীদের বাঁচার জন্য আর্তনাদ। সকাল সকাল পঞ্চায়েতের পৌঁছে গাইসাল দুর্ঘটনার সেই সব অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন অন্যান্য সদস্যদের। তাঁর কথায়, "সে সময় কত লোককেই না আমরা উদ্ধার করেছিলাম। অনেককে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম।"
বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির ট্রেন দুর্ঘটনা ফের গাইসালের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে। সাব্বির (ডাব্লু প্রধান) বলেন, "অত বড় ট্রেন দুর্ঘটনা চোখের সামনে দেখতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। এখনও মাঝে মাঝে শিউরে উঠি। উপরওয়ালা যেন এমন দিন কাউকে না দেখায়।"
শুধু তিনি একাই নন, একই পরিস্থিতি ঘটনার পর উদ্ধার করতে যাওয়া কিংবা দেখতে যাওয়া অসংখ্য মানুষের। গাইসাল স্টেশন সংলগ্ন দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেকেই বলে উঠলেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। চায়ের দোকানি ৭০ বছরের নরেন দাসের বাড়ি গাইসালেই। সেই রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়েছিলেন। ভোরে হইচই শুনে তিনিও ছুটে আসেন।
তাঁর কথায় "এখনও মাঝে মাঝেই কানে বেজে ওঠে সেই আর্তনাদ।" বছর তিরিশের যুবক রাজা বিশ্বাস বলেন, "তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। প্রাইমারি স্কুল থেকে ছুটতে ছুটতে গিয়েছিলাম। মনে পড়লেই শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যায়।" ইসলামপুরের যুবক বিনয় লায়েক বলেন, "তখন পাঞ্জিপাড়ায় থাকতাম। ঘটনা শুনে গিয়ে দেখি, কারও হাত কাটা গিয়েছে, কেউ আটকে ট্রেনের মাঝে। ঠিক এই ময়নাগুড়ির মতোই।’’
১৯৯৯ সালের ২ অগস্ট গভীর রাতে গাইসাল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ব্রহ্মপুত্র মেল ও অবোধ আসাম এক্সপ্রেস ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মৃত্যু হয় বহু যাত্রীর। গুরুতর জখম যাত্রীদের বের করতে অনেকদিন সময় লেগে যায়। সেই ভয়ানক দিনগুলোর কথা এখনও ভুলতে পারেনি গাইসাল।