রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ ২০০ কোটি। — ফাইল চিত্র।
গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাস্তা তৈরিতে জোড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে কোচবিহার জেলায় ৩৪৬টি রাস্তার অনুমোদন মিলেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮৯১ কিলোমিটার পাকা ও কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হবে। ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে যে জন্য মিলেছে ২০০ কোটির উপরে বরাদ্দ। যার একাংশের কাজ করবে কোচবিহার জেলা পরিষদ। তার বাইরেও আরও কয়েকটি সংস্থাকে দিয়ে ওই রাস্তার কাজ করা হবে। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ওই রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আমরা ধারাবাহিক ভাবে উন্নয়নের কাজ করছি। তা অব্যাহত থাকবে।’’ভোটের মুখে রাস্তার কাজ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পাঁচ বছরে কেন ওই রাস্তাগুলির কাজ হয়নি! বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘এতদিন কেন কাজ হয়নি! ভোটের মুখে কিছু কাজের বরাদ্দ দিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করে লাভ নেই। মানুষ সব বুঝতে পেরেছে।’’
কোচবিহার জেলার গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। শহর থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘুঘুমারি এলাকায় রাস্তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ঘুঘুমারির তোর্সা নদী লাগোয়া বাড়ুইপাড়া গ্রামের একটি রাস্তা দীর্ঘসময় ধরে বেহাল। ওই রাস্তা বালি-পাথর দিয়ে তৈরি। বহু জায়গায় বালি-পাথর উঠে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষায় রাস্তার একাধিক অংশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কয়েক জায়গায় জলে ডুবে থাকে রাস্তা। শুধু ওই এলাকা নয়, এমন অভিযোগ রয়েছে কোচবিহার জেলার বারোটি ব্লকেই। দিনহাটার বুড়িরহাট ২ পঞ্চায়েতেও একই অভিযোগ রয়েছে। কিছু কিছু রাস্তায় বালি সরে গিয়ে শুধু পাথর ছড়িয়ে রয়েছে। যেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। কিছু রাস্তা আরও বেহাল। দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ থেকে শুরু করে একাধিক তৃণমূল নেতাকে এ নিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। এ বার ওই রাস্তার জন্য টাকা বরাদ্দ হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। কোচবিহার জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে আমরা গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন করেছি। ছোট ছোট রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এ বার বাকি থাকা কিছু রাস্তার কাজ হবে।’’
বিরোধীরা অভিযোগ করেন, কোচবিহার জেলা শহর সংলগ্ন চিলকিরহাট, চান্দামারি থেকে শুরু করে সীমান্ত গ্রাম শালমারা, চৌধুরিহাট থেকে সিতাই, শীতলখুচি, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জের একাধিক গ্রামে রাস্তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বহু জায়গায় এখনও কালভার্ট হয়নি। একাধিক গ্রামে নদীর উপরে বাঁশের সাকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন গ্রামের বাসিন্দারা। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘দশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। তার পরেও গ্রামের রাস্তা, সেতু কোনওটাই তৈরি করতে পারেনি। এখন ভোটের মুখে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।’’ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে গ্রামের কী অবস্থা ছিল, এখন কী আছে, মানুষই বলে দেবেন। বিজেপি ভোট রাজনীতির জন্য নানা কথা বলে।’’