কুমারগ্রামে দাঁড়াচ্ছেন জেমস কুজুর

পুলিশকর্তা তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভ বিরোধীদের

যিনি রক্ষক, তিনিই প্রার্থী। সারা দিন এমনকী, সন্ধ্যার পরেও যিনি কাজ করে গেলেন জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে, কালীঘাট থেকে তাঁর নামই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়েই। শুকত্রবার সন্ধ্যায় বিরোধীরা বলছেন, উনি এখনও ইস্তফা দেননি, এটা চলতে পারে না। কুজুর অবশ্য বলেছেন, সব কিছুরই একটা প্রক্রিয়া থাকে, সেই ধারা মেনেই পদত্যাগ করবেন তিনি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২৪
Share:

যিনি রক্ষক, তিনিই প্রার্থী। সারা দিন এমনকী, সন্ধ্যার পরেও যিনি কাজ করে গেলেন জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে, কালীঘাট থেকে তাঁর নামই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়েই। শুকত্রবার সন্ধ্যায় বিরোধীরা বলছেন, উনি এখনও ইস্তফা দেননি, এটা চলতে পারে না। কুজুর অবশ্য বলেছেন, সব কিছুরই একটা প্রক্রিয়া থাকে, সেই ধারা মেনেই পদত্যাগ করবেন তিনি।

Advertisement

জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর স্পর্শকাতর পরিস্থিতি সামলাতে বেশ দক্ষ অফিসার বলেই পরিচিত। সেই সঙ্গেই, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছের লোক বলেও পরিচিত। তাই শুক্রবার বিকেলে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম দেখে পুলিশ মহলে কেউ অবাক হননি।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও নিজের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিসেই উর্দি পরে বসে ভোট নিয়েই কথা বলতে দেখে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ইস্তফাপত্র দেননি বা স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জেলার ভোট পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতে হয়। সে কারণেই বিরোধীদের প্রশ্ন, জলপাইগুড়ি জেলার ভোটের কাজ তবে শুক্রবার দিনভর একজন তৃণমূল প্রার্থী হিসেবেই পরিচালনা করলেন? বিরোধী দলগুলি বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক পৃথা সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়ার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ভোট বিধি লাগু হয়েছে। বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে।’’

জেমস কুজুর নিজে জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাবসর নিতে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে, তিনি ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইস্তফা দেওয়ার জন্য আমি মানসিক ভাবে তৈরি ছিলাম। আজই ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেব। মানুষের জন্য কিছু করতে চাই বলেই প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি।’’

জেমস কুজুরের দক্ষতা ও আনুগত্যের প্রমাণ কিন্তু বারবারই পাওয়া গিয়েছে। কয়েক মাস আগে কোচবিহারে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বাসিন্দাদের গোলমালের খবর রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে পৌঁছনোর পরেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গভীর রাতেই জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ মহলে কথিত রয়েছে, স্পর্শকাতর পরিস্থিতি সামাল দিতে জেমস কুজুরকে পাঠানোর নির্দেশ এসেছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেই। পুলিশ মহলে বরাবরই মুখ্যমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত ১৯৮৬ সালের ডব্লুবিপিএস ব্যাচের এই অফিসার।

এর আগে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা রচপাল সিংহ গত বিধানসভা ভোটে জিতে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। তবে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, তাও শাসকদলের হয়ে এমন উদাহরণ বিরল বলেই দাবি করেছেন অনেকে। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পুলিশ এবং প্রশাসনের একাংশ অফিসারেরা নিজেদের দলদাসে পরিণত করেছেন বলে বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ভোটে দাঁড়ানোর ঘটনা সেই অভিযোগকেই প্রমাণিত করল বলে দাবি সিপিএম-কংগ্রেসের জেলা নেতাদের। জেমস কুজুর অবশ্য এর মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না।

তবে সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের কথায়, ‘‘এরপরে তো দেখা যাবে ভোটে জিততে শাসক দলের ধামা ধরে সব পুলিশ অফিসারেরা কাজ করছেন। দাপুটে পুলিশ কর্তারাও প্রার্থী হতে লাইন দেবেন। তৃণমূল রাজ্যের গণতন্ত্রকে শেষ করেছে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতাকেও ধ্বংস করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে যাব।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষদস্তিদারের কটাক্ষ, ‘‘মাননীয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব এতদিন কেমন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন, তা আজ প্রমাণিত হল। উনি এতদিন উর্দি পরে তৃণমূলের কাজ করেছেন, এখন উর্দি ছাড়া করবেন।’’

আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জেমস কুজরকে। গত লোকসভা ভোটেও তিনি তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন বলে জল্পনা ছিল। সে সময় তিনি দাবি করেছিলেন, সবই গুজব। দার্জিলিঙের চা বাগানে আদি বাড়ি এই পুলিশ কর্তার। পড়াশোনা কার্শিয়াঙের স্কুলে। ডব্লুবিপিএস প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে কিছু দিন হুগলি তারপরে উত্তরবঙ্গেই কাজ সামলেছেন। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক তৃণমূল নেতার মাধ্যমে জেমস কুজুরের কালীঘাটে যাতায়াত শুরু হয় বলে পুলিশ মহলের খবর। সে কারণে অনেককে টপকে নিজের পছন্দের জলপাইগুড়ি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদ পেতেও দেরি হয়নি তাঁর। যদিও, জেমস এ দিন বলেন, ‘‘আগামী অক্টোবরেই আমার অবসরের সময় ছিল। চা বাগানে আমার জন্ম। চা শ্রমিকদের জন্য কাজ করতে চাই। রাজনৈতিক কারণে কেউ ভিত্তিহীন কথা বললে আমার কিছু বলার নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement