আর কয়েকটা মাত্র দিন। এ বার প্রথম ভোট দেবেন সুমি দাস। তৃতীয় লিঙ্গের তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে। শুধু তাঁর নয়, কোচবিহার জেলায় ১০ জনের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। সংখ্যাটা কম। তবুও অনেক আশা মনে নিয়ে সুমি বলেন, “সরকারে যে দলই আসুন না কেন, এ বার আমাদের উন্নয়নের কথা ভেবে কাজ করবেন তাঁরা।” সুমি বলেন, এর আগে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ পরিচয়েই ভোটার তালিকায় নাম তোলার ব্যবস্থা না থাকায় তিনি নিজের নাম তোলেননি। এ বার সেই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় নাম তুলেছেন।
তবে তাঁর আক্ষেপও রয়েছে। তিনি জানান, তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। গ্রামে বা বাড়িতে নানা হেনস্থার মুখে পড়তে হয় বলে অনেকেই প্রকাশ্যে আসছেন না। তাই তাঁর দাবি, ওই সংখ্যা জেলায় মাত্র ১০ নয়, তার থেকে অনেক বেশি। তিনি বলেন, “আমরা জানি ওই সংখ্যাটা আসলে বেশি। কিন্তু তাঁদের অনেকেই প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না বলে ভোটার তালিকাতেও নাম উঠছে না।’’
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “সবাই যাতে ভোট কেন্দ্রে যান, সে জন্য আমরা প্রচারও চালিয়েছি।”
তবে এই প্রচার আরও ব্যাপক ভাবে কড়া উচিত বলে মনে করেন সুমি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রুপান্তরকামীদের নিয়ে একটি সংগঠন (মৈত্রীসংযোগ) তৈরি করে কাজ করছেন। একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার থেকে শুরু করে কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন ব্যক্তিগত ভাবে। শীতলপাটির কাজ শেখাতে উদ্যোগী হয়েছেন। সরকারি স্তরে কোনও সুযোগ-সুবিধে তাঁরা পাননি।
তিনি জানান, হাসপাতালগুলিতে তাঁদের জন্য আলাদা শয্যা রাখা দরকার। সে বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁরা দাবি তুলেছেন। এ ছাড়া কর্ম সংসস্থানের ক্ষেত্রেও সরকারি সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, “অধিকার আদায়ে লড়াই দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। এ বারে সবাই আমাদের দিকে নজর দেবে বলে আশা করছি।”
কোচবিহার জেলায় এ বারে ভোটারের সংখ্যা রয়েছে ২১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০ জন। মহিলা ভোটার ১০ লক্ষ ২৩ হাজার ৫০১ জন। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে মাথাভাঙায় রয়েছেন ১ জন, কোচবিহার উত্তরে ৫ জন, কোচবিহার দক্ষিণে ২ জন, শীতলখুচিতে ১ জন এবং সিতাইয়ে ১ জন। সংগঠন সূত্রে মনে করা হচ্ছে, যাঁরা ভয় ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁরাই কেবল নিজেদের পরিচয় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশই তা করতে পারেননি। সুমি বলেন, “সচেতনতামূলক প্রচার করলে এই সংখ্যা আগামীতে অনেক বাড়বে।’’