ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে আরও এক জনের মৃত্যু হল cতে। বুধবার ভোরে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে তিনি মারা যান। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম দেবকুমারী শাহ (৪৪)। বাড়ি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহারাজ কলোনির গোয়ালাপট্টি এলাকায়। এনএসওয়ান পরীক্ষায় তাঁর শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। তাঁর মৃত্যুর কারণে ফ্ল্যাভি ভাইরাসের সংক্রমণও দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বুধবার চার নম্বর ওয়ার্ডেরই দুর্গানগর কলোনিতে ডেঙ্গিতে এক ব্যক্তি মারা যান। গত দু’সপ্তাহে শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো চার। শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবেই দু’শো ছাড়িয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এনএসওয়ান পজিটিভ থাকলেও ডেঙ্গিতেই ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে কি না দেখা হচ্ছে। ওই ভাইরাসের সংক্রমণে ডেঙ্গিও হতে পারে।’’
গোয়ালাপট্টি এলাকায় অনেক বাড়িতেই জ্বরের রোগী রয়েছেন। ১২,১৫,১৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও ৪,৫, ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে বলে জেলা স্বস্থ্য দফতর জানিয়েছে। একই বাড়িতে দু’জন, চারজন আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর।
দেবকুমারী দেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় রবিবার তিনি এক চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ আনেন। জ্বর নেমে যায়। কিন্তু পরদিন প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হওয়ায় তাঁকে খালপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন থেকেই তাঁর রক্তে প্লেটলেট ৩৫ হাজারে নেমে আসে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। দুই দিনে মোট দশ ইউনিট প্লেটলেট দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, প্লেটলেট জোগার ও নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে গিয়েও বিপাকে পড়েন বাড়ির লোকেরা। তাঁর স্বামী সরফজিৎ শাহ, ছেলে প্রমোদ শাহরা জানান, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমার কার্ড কোথাও নিতে চাইছিল না। কার্ড থাকলেও নার্সিংহোম থেকে পরিষেবা পেতে, প্লেটলেট কিনতে টাকা দিতে হয়েছে। কাউন্সিলরকে জানালে তিনিই তা মেয়রকে জানান। মেয়র মহকুমা শাসককে সমস্যার কথা জানিয়ে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেন।
এ দিন সকালে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমাশাসক, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে প্লেটলেট পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বুধবার ৬০ ইউনিট প্লেটলেট ছিল। প্লেটলেটের অভাব নেই। কেউ সমস্যায় পড়লে আমার দফতরে বা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’
মেয়র বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য বিমার কার্ড থাকলেও পরিষেবা মিলছে না। মহকুমাশাসককে দেখতে বলেছি। বেশি টাকা দিয়ে প্লেটলেট কিনতে হচ্ছে।’’ মহকুমাশাসক ফিরোজ দানেশ্বর জানান, মেয়রের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পরেই তিনি খতিয়ে দেখছেন। নার্সিংহোমগুলোকে নিয়ে তারা শীঘ্রই বৈঠক করবেন। শিলিগুড়ি বয়েজ স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ডেঙ্গি সচেতনতায় এ দিন লিফলেট বিলি করেন মেয়র। নিজেদের এলাকায় পরিচিতদের মধ্যে ওই লিফলেট দিতে বলেন তিনি।
এ দিকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে জ্বরের রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসার দাবিতে এ দিন হাসপাতাল সুপারকে স্মারকলিপি দিল ডিওয়াইএফ। এই হাসপাতালের বহিবির্ভাগে এখন প্রতিদিন ১৮০০ থেকে ২ হাজার রোগী আসছে। তার মধ্যে ৬০ শতাংশই জ্বরের। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় দেড়শো জ্বরের রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের একাংশ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলেই সন্দেহ চিকিৎসকদের।