বিকেল ৩টে পেরিয়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের শামুকতলা রোড রেল স্টেশন সংলগ্ন খাটাজানি ১৬৫ নম্বর রেল ব্রিজের নীচে বসে মাছ ধরছিলেন দুই যুবক। হঠাৎ তাঁরা দেখতে পান, রেল-ব্রিজের ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছেন ঠিকাদার সংস্থায় কর্মরত তিন রেল-শ্রমিক। আর নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনের দিক থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে আপ চণ্ডীগড় এক্সপ্রেস। রেলব্রিজে কর্মরত শ্রমিকেরা ট্রেনের ইঞ্জিন দেখতে পেয়ে কাজ ফেলেই জীবন বাঁচাতে রেল ব্রিজ ধরে উল্টো দিকে দৌড়োতে থাকেন। দৌড়ে ব্রিজ পেরিয়ে প্রথম দু’জন নীচে খাটাজানি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচলেও, তৃতীয় জন ইঞ্জিনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন উল্টো পাশের লাইনে। মাছ ধরা ছেড়ে দুই যুবক লাইনের উপর গিয়ে দেখেন, আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের চেপানি চৌপথি এলাকার বাসিন্দা অমল দের (৫৩) মাথা ততক্ষণে দেহ থেকে আলগা হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
রেল ব্রিজে কর্মরত শ্রমিক ও স্থানীয়দের সূত্রে খবর, প্রায় একই ঘটনা বৃহস্পতিবারও ঘটেছিল। ওই দিন তিন শ্রমিক দৌড়ে প্রাণে বাঁচেন। ইতিমধ্যে এই মৃত্যুর ঘটনায় রেল এবং ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয়েরা। ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন রেলের শীর্ষ আধিকারিকেরা।
ওই ঠিকাদার সংস্থার শ্রমিক এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দিন রেল ব্রিজের নীচে পিলারের উপরে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে ব্রিজের উপরে কাজ করছিলেন তিন শ্রমিক। অন্য দিকে, নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে রেলের তরফে এক জন ওই লাইনে ট্রেন আসছে কি না, জানানোর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। খাটাজানি ১৬৫ নম্বর রেল ব্রিজেও এক জন রেলকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে খবর। যদিও ওই রেল সেতুর আগে একটি বাঁক থাকায় ট্রেন আসছে কি না স্পষ্ট না বুঝতে পারাতেই, এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, রেললাইন ‘ব্লক’ না করে কাজ করার ফলেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাপজোকের কাজ চললেও কেন রেললাইন আটকে তা করা হল না, সে প্রশ্নে অবশ্য রেলকর্তাদের সদুত্তর মেলেনি। এ ছাড়া, রেললাইনে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কাজ চলাকালীন দ্রুত গতিতে ট্রেন যাওয়ায় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলেও আশঙ্কা স্থানীয়দের।
যদিও রেলের দাবি, ব্রিজ ইনস্পেক্টরের উপস্থিতিতে ওই রেল সেতুতে একটি কাজ করার প্রস্তুতি চলছিল। ঠিকাদার সংস্থার তিন জন রেল শ্রমিক কাজের মাপজোক করছিলেন। আচমকাই ট্রেন চলে এলে, তিন শ্রমিককে সতর্ক করা হয়। দু’জন দৌড়ে বাঁচলেও এক জনের ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়। রেল পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী তথা কর্মরত ঠিকাদার সংস্থার এক রেলশ্রমিক রঞ্জন বসুমাতা বলেন, ‘‘তিন জন এক সঙ্গে কাজ করছিলাম। আচমকাই ট্রেন চলে আসায় ব্রিজ ধরে দৌড়তে শুরু করি। দু’জন প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিই। কিন্তু ট্রেনের ধাক্কায় এক জনের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবারও একই ভাবে ট্রেন চলে এসেছিল। সে দিন তিন জনেই দৌড়ে বেঁচেছিলাম। আজ আর হল না। ওই সংস্থার ঠিকাদারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, মেসেজেরও উত্তর দেননি।।
আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম দিলীপকুমার সিংহ বলেন, ‘‘ওই রেল ব্রিজে কাজের প্রস্তুতি চলছিল। তখনই ট্রেন চলে আসে। দু’জন পালিয়ে বাঁচেন, এক জনের ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়। রেলের তরফে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হবে।’’