Coromondel Express Accident

দেহ এক, দাবিদার অনেক

বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা একাধিক যাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ০৮:৫৬
Share:

বাড়িতে পৌঁছয়নি ইউনিসের দেহ, ভেঙে পড়েছেন দিদি ও বোনেরা। ইংরেজবাজারের মাঝা গ্রামে। ছবি: স্বরূপ সাহা

যন্ত্রণার এক সুতো বেঁধেছে তিন পরিবারকে। মালদহের যদুপুর, ধানগাড়া-বিষনপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির তিনটি পরিবার প্রিয়জনের দেহ শনাক্ত করতে হয়রান। বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার পরে তিন দিন কাটলেও শনাক্তকরণ নিয়ে ‘বিভ্রান্তিতে’ দেহ পাননি, দাবি পরিবারগুলির। সোমবারও ঘরের ছেলেদের অপেক্ষায় কান্নায় চোখ ভাসিয়েছেন ইউনিস শেখ, নুরুল ইসলাম এবং আনজারুল হকের আত্মীয়-স্বজনেরা।

Advertisement

যদিও দেহগুলির শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ-পরীক্ষায় জোর দিচ্ছে প্রশাসন। মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “মালদহের দু’টি দেহ শনক্তকরণ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। ওড়িশায় পরিবারগুলিকে সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসনের দলও রয়েছে। দেহগুলির ডিএনএ-পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, ‘‘বহু দেহ দু’তিন জায়গায় রাখা আছে। নিখোঁজদের পরিবারের লোকজন দেখছেন। দেহ শনাক্ত হলে, দ্রুত ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে।’’

বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা একাধিক যাত্রী। মালদহের ইংরেজবাজারের যদুপুরের বাসিন্দা ১৮ বছরের তরুণ ইউনিস শেখ অন্ধপ্রদেশে ফলের ‘প্যাকেজিং’-এর কাজে গিয়েছিলেন। তিনি মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা সাজাদ আলি শ্রমিকের কাজ করেন। শুক্রবার অন্ধপ্রদেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ইউনুস। সাজাদ বলেন, “রবিবার ভাই, বড় ছেলে গিয়ে ছোট ছেলে ইউনিসের দেহ শনাক্ত করে। পরে, হাওড়া এবং মালদহের এক পরিবার গিয়ে দেহটি তাদের বলে দাবি করে। ফলে, আমাদের দেহ দিয়েও ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এখন বলা হচ্ছে ডিএনএ-পরীক্ষা হবে।”

Advertisement

একই সমস্যায় পড়েছেন চাঁচলের ধানগাড়া-বিষণপুরের বছর ষোলোর নুরুল ইসলামের পরিবারও। তাঁদের দাবি, দেহ শনাক্তের জন্য তিন দিন ধরে বালেশ্বরে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তার পরেও ছেলের দেহ মিলছে না বলে আক্ষেপ করেন বাবা আলাউদ্দিন ইসলাম। তিনি বলেন, “এ-দিক ও-দিক ঘুরে ছেলের দেহ খুঁজে পাই। ছবি দেখানোর পরে কর্তৃপক্ষ দেহ দিতে রাজি হন। পরে, জানানো হয়েছে, এই দেহের একাধিক দাবিদার আছে। কী হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

দেহ শনাক্ত করতে বিপাকে পড়ে করণদিঘির পরিযায়ী শ্রমিক আনজারুল হকের পরিবারও। তাঁর খড়তুতো ভাই সাদ্দাম হোসেনের দাবি, “রবিবার রাতে ভুবনেশ্বরের এক হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের দেহ শনাক্ত করি। সোমবার সকালে আমাদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে সকালে গিয়ে দেখি, ওই নম্বরের দেহ হাওড়ার এক বাসিন্দার বলে নিয়ে গিয়েছে। তা হলে আমার ভাইয়ের দেহ কোথায় গেল!” তবে রাতে হাওড়ার দেহটিকে তাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের বলে দাবি করবেন না বলে এ দিন সন্ধ্যায় প্রশাসনের কাছে লিখিত দিয়েছেন আনজারুলের বাবা মহিবুল হক। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের লোকজন এসেছিলেন। হাওড়ার ওই পরিবারের লোকজনও ফোন করেছিলেন। তাই দেহ আটকে রেখে লাভ নেই। ডিএনএ-পরীক্ষায় যাব না। তাই ছাড়পত্র দিয়ে দিলাম।’’

পরিবারাটি সে কথা বিডিও-কে লিখিত জানিয়েছে। বিডিও নীতিশ তামাং বলেন, ‘‘ওঁদের ডিএনএ-পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। তাতে রাজি হননি। ফলে, দেহ নিয়ে জটিলতা রইল না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement