জীবন: রায়পুর গ্রামে মহানন্দায় মাছ ধরতে ব্যস্ত দুলাল মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
টানা চার দশক ধরে সম্পর্ক। তাতে ইতি টেনে অভিমানে চলে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে। লকডাউনেই মহানন্দা নদীর সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্ব জুড়ল ইংরেজবাজার ব্লকের রায়পুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ দুলাল মণ্ডলের।
দুলাল বলেন, “বাবা, ঠাকুরদার সময় থেকেই মহানন্দার সঙ্গে সম্পর্ক। ৪০ বছর ধরে নদীতে নাগিন, দোহার জাল নিয়ে দাপিয়েছি। রুই, কাতলা, পুঁটি, বোয়াল, আড় মাছ তো বটেই, নাগিনের ফাঁসে আটকেছি ইলিশকেও। মাছ বেচেই সংসার চলত।’’ বছর দু’য়েক ধরে মাছ ধরার পেশা বদলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে দিল্লিতে চলে যান দুলাল। তিনি বলেন, ‘‘নদীতে মাছ কমে গিয়েছিল। যা মিলছিল, তা দিয়ে সংসার চলে না। বাধ্য হয়েই দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে যাই।’’
লকডাউন-ই ফের মিলিয়ে দিল নদী আর দুলালকে। কাজ হারিয়ে দিল্লি থেকে ২৫ দিন আগে বাড়ি ফেরেন দুলাল। তিনি বলেন, ‘‘ফিরেই দেখি টলটল করছে মহানন্দার জল। জ্যৈষ্ঠেও নদী টইটম্বুর। আর দেরি করিনি, জাল নিয়ে নেমে পড়েছি জলে। এখন তাতেই আয় হচ্ছে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা।”
শুধু দুলাল নন, ফের নদীতে ঝুঁকেছেন ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রায়পুর গ্রামের ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শতাধিক মানুষ। হরেন মণ্ডল, বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে দিনভর নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে ৪০০-৫০০ টাকা পাওয়া যায়। এখন মহানন্দায় সকাল-বিকেল মাছ ধরে সেই টাকাই আয় হচ্ছে।’’ তাঁদের বক্তব্য, দূষণের জেরেই নদীতে মাছ কমে গিয়েছিল। লকডাউনে দূষণ অনেকটাই কমেছে। ফলে মহানন্দায় ফের বেড়েছে মাছের জোগান। মহানন্দা সারা বছর এমন থাকলে আর ভিন্ রাজ্যে কাজের সন্ধানে ছুটতে হবে না, জানিয়েছেন তাঁরা।
লকডাউনে বন্ধ ছিল কল-কারখানা, যানবাহন। তাতেই দূষণ কমেছে, বলছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, কারখানার বর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ে নদীতে। তাতে জল দূষিত হয়ে যায়। শুখা মরসুমে কার্যত নালার চেহারা নেয় মহানন্দা।
তবে এ বার ছবিটা একেবারে আলাদা। মালদহের মৎস্য আধিকারিক নীলোৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে নদীর জল অনেকটাই দূষণমুক্ত। তাতে মাছের জোগান বেড়েছে। এ ছাড়া দফায় দফায় ভারী বৃষ্টি হওয়ায় নদীতে জলও বেড়েছে।’’
মালদহ জেলা জুড়েই মহানন্দার রূপ এখন এমনই। আর দূষণ-হীন সেই মহানন্দাকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।