ব্যাগই-বিছানা: ট্রেন বাতিলের পরে রাতে এনজেপি স্টেশন থেকে যেতে পারেননি অনেকে। রাত কেটেছে স্টেশনেই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে গোলমালের জেরে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ায় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। রবিবার দুপুরের পর থেকে এক এক করে বন্ধ করে দেওয়া হয় দার্জিলিং মেল, উত্তরবঙ্গ, পদাতিক এক্সপ্রেস। তার সঙ্গেই অসম থেকে কলকাতা এবং দক্ষিণ ভারতের দিকের ট্রেনগুলিও বাতিল হয়। এই ট্রেনগুলির উপর প্রচুর মানুষ ভরসা করে থাকেন। অনির্দিষ্ট কালের জন্য ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তর জুড়েই। প্রশ্ন উঠছে, কবে ফের ট্রেন চলবে। তবে অসম থেকে নর্থ ইস্ট রাজধানীর মতো কাটিহার হয়ে দিল্লিগামী ট্রেনগুলি এ দিন চলাচল করেছে।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এলাকায় ভালুকা রোড স্টেশনে এ দিন নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পড়ে। রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, ‘‘ভালুকা রোডে স্টেশনের কী কী ক্ষতি হয়েছে, লাইন ঠিক রয়েছে কি না, তা যাচাই করেই সোমবার ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে বলা সম্ভব।’’ তবে স্টেশন পরীক্ষার কাজে অনেক সময় লাগে বলে রেল সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তাঁরা জানান, ট্রেন লাইনের উপর আগুন জ্বললে লাইন তাপে গলে যেতে পারে। তাতে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই লাইন পরীক্ষা করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ফিট সার্টিফিকেট দিলে তবেই ওই রুটে ট্রেন চলাচল ফের স্বাভাবিক হতে পারে।
গত কয়েক দিন থেকেই অসমের গোলমালের জেরে ব্যাহত হয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের ট্রেন পরিষেবা। শনিবার হরিশচন্দ্রপুরে গোলমালের পরে উত্তরবঙ্গ এবং কাটিহার থেকে কলকাতার দিকে যোগাযোগের মোট ২৫ জোড়া ট্রেন বাতিল হয়। এ দিন নতুন করে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগকারী সমস্ত ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। অসম থেকে আসা ট্রেনগুলিও কলকাতা বা দক্ষিণের দিকে ভালুকা রোড হয়েই যায়। তাই রবিবার অসমের দিক থেকে আসা ট্রেনগুলিকেও বিভিন্ন স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান রেলকর্তারা।
শিলিগুড়ি জংশন, এনজেপি এবং আলিপুরদুয়ার থেকে অসমের বঙ্গাইগাঁও, গুয়াহাটি এবং ধুবড়ির মধ্যে যাতায়াতকারী কয়েকটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগেই বাতিল করা হয়েছে। বিকেলের পর সরাইঘাট নিউ বঙ্গাইগাঁও থেকে গুয়াহাটি ফিরে যায়। কয়েকটি ট্রেন ফিরিয়ে আনা হয় এনজেপিতে। বেঙ্গালুরুগামী কয়েক জন যাত্রী স্টেশনেই অপেক্ষা করতে থাকেন দীর্ঘ সময়। তিস্তা-তোর্ষা বাতিলের খবর পেয়ে অনেকেই বাস বা অন্য গাড়ির সন্ধানে বেরোন।
নিউ আলিপুরদুয়ারেও বিভিন্ন ট্রেন আটকে বিপদে পড়েন যাত্রীরা। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব স্টেশনে গিয়ে যাত্রীদের পানীয় জল এবং খাবারের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। আগরতলার দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা বাতিল হয়েছে বৃহস্পতিবারই। বেশ কিছু যাত্রী আটকে রয়েছেন স্টেশনে। আলিপুরদুয়ার জংশনেও বেশ কিছু পর্যটক এদিন ট্রেন বাতিলের খবর পেয়ে সড়কপথেই শিলিগুড়ির দিকে রওনা হন।
উত্তরবঙ্গ, তিস্তা তোর্ষা এবং পদাতিকের উপর কোচবিহারের একটি বড় অংশের মানুষ নির্ভরশীল। চারটি ট্রেন বাতিল হওয়া সকাল থেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন অনেকে। কয়েক জন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কাউন্টারে টাকা ফেরতের লাইনে ভিড় বাড়তে শুরু করে।