উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বেসরকারি হাতে, চিন্তায় একাধিক কর্মচারী সংগঠন

কর্মচারী সংগঠনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের কাজকর্ম এত দিন সংশ্লিষ্ট বিভাগই দেখভাল করত। তাতে পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গেই তাঁরা কাজ করেছেন।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১০
Share:

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা ভার দেওয়া হবে বেসরকারি সংস্থাকে। —ফাইল চিত্র।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার পুরোটাই কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলা পরীক্ষা এবং পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের বিভিন্ন কাজকর্ম ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত’ পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি হাতে তুলে দিতে টেন্ডারও ডাকা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সমস্ত গোপনীয়তা থাকে, সে সব নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারী সংগঠন। বৃহস্পতিবার সমাবর্তনের আগে তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেও জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

কর্মচারী সংগঠনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের কাজকর্ম এত দিন সংশ্লিষ্ট বিভাগই দেখভাল করত। তাতে পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গেই তাঁরা কাজ করেছেন। দ্রুততার সঙ্গে ফল প্রকাশ থেকে পরীক্ষার পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (ন্যাক) বিচারেও প্রশংসা পেয়েছে। তা হলে কেন এবং কী পরিস্থিতিতে তা বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠনগুলো, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদেরও অনেকেই।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘আগের পদ্ধতি নিশ্চয়ই ভাল ছিল। তবে পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন যে ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, তাতেও ভালই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যাতে অক্ষুন্ন থাকে, সে সব দেখেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে তারাও দক্ষতাসম্পন্ন, যোগ্য সংস্থা হবে।’’

Advertisement

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির তরফে উপাচার্যের কাছে দিন কয়েক আগে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে, পরীক্ষা সংক্রান্ত যে সমস্ত কাজ অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করা হত, বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে করালে তা নষ্ট হতে পারে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানি ঘটতে পারে। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে বিশ্ববিদ্যালয়েই জায়গা দিয়ে কাজ করতে সহায়তা করা হবে বলে তারা জানতে পারেছেন। তাতে পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের কর্মীদের অনিশ্চয়তার দিকে একধাপ ঠেলে দেওয়া হবে।

অন্তত ৬০ জন কর্মী রয়েছেন ওই বিভাগে। পরীক্ষার কাজ সংক্রান্ত গোপনীয়তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান তো বটেই, পড়াশোনার পরিবেশও নষ্ট হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা বাংলা শিক্ষা বন্ধু সমিতির সভাপতি গুরুচরণ রায় বলেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরাও চাই না পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের কাজকর্ম এ ভাবে সমস্তটা বেসরকারি হাতে চলে যাক।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন প্রশ্ন তৈরির পর বাইরের কোনও সংস্থার প্রেসে ছাপার কাজ হত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের নজরদারিতে তা করা হত। বেসরকারি সংস্থায় ব্যবহৃত যাবতীয় গোপনীয় নথিই কাজের পর নষ্ট করে দেওয়া হত। কলেজের পড়ুয়াদের নথিভুক্তি, ফর্ম তৈরি, রেজাল্ট তৈরির কাজও করানো হত আলাদা সংস্থাকে দিয়ে। স্নাতকোত্তর বিভাগে অবশ্য সে সব কাজ পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগই করত। পরীক্ষার খাতা পৌঁছনো থেকে সবই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা করতেন। নতুন ব্যবস্থায় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। তার পর থেকে ফল প্রকাশ, কাকে দিয়ে খাতা দেখান হবে, তাদের পারিশ্রমিক— সমস্ত সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কতটা থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement