অবহেলা: রক্ষণাবেক্ষণে পেশাদারিত্বের অভাব। নিজস্ব চিত্র
শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের পুরনো কাঠের পাটাতনে দলবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় পুরুষ্টু আরশোলার বংশধর। কোথাও, ধুলোর পরত-জমা কাচের তাকে টিকটিকির লাগামহীন চলাফেরা।
ইউনেস্কোর দেওয়া বিশ্ব ঐহিত্যের তকমা পাওয়া দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর) কুড়ি বছর বর্ষপূর্তি পালন করার পরিকল্পনা করেছে ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু টয় ট্রেনের সুকনা স্টেশন লাগোয়া রেল সংগ্রহশালাটির অবস্থা এরকমই বলে নজরে এসেছে। অবহেলায় পড়ে রয়েছে টয় ট্রেনে ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত বহু প্রাচীন সামগ্রী। রেলের তরফে অবশ্য দাবি, সাধ্য মতো সব সংগ্রহশালাগুলিই রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজ হয়।
ব্রিটিশ আমলে ট্রেনের সিগন্যাল দিতে ব্যবহার হত রঙিন কাচ লাগানো লণ্ঠনের আলো, তরল জ্বালানির বাতি। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার ঠিক আগে আগে বড় পিতলের ঘণ্টা বাজিয়ে তা আগাম জানান দেওয়া হত যাত্রীদের। দার্জিলিং স্টিম ট্রামওয়ে কোম্পানি শিলিগুড়ি থেকে ন্যারো গেজ লাইন তৈরির কাজ শুরু করেছিল ১৮৭৯ সালে। ১৮৮০ সালে তা তিনধারিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ১৮৮১ সালের পর দার্জিলিং পর্যন্ত। ইতিহাস বলছে, তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড লিটন টয় ট্রেনে চড়ে কখনও আসতেন ছুটি কাটাতে। তারও পরে বাণিজ্যিক যাতায়াত শুরু হয়েছিল টয় ট্রেনে। শুকনা স্টেশনের সঙ্গেই লাগোয়া একটি কাঠের দোতলা বাড়িটিতে থাকতেন ব্রিটিশ স্টেশন মাস্টার। দিনের বেলা ট্রেন চলে গেলে রাতে লণ্ঠনের আলোয় ব্যক্তিগত কাজকর্ম সারতেন তিনি। সেই সময় গিয়েছে। কিন্তু সেই নিদর্শনগুলি স্থান পেয়েছে সংগ্রহশালায়। সুকনায় সেই সংগ্রহশালায় ক্যামেরায় তোলা বাঁধানো পুরনো ছবি ছাড়াও বেশ কিছু গামগ্রী তবে তাও সেটি ‘ফটো গ্যালারি’ বলেই নথিভুক্ত রয়েছে রেলের নথিতে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের অধিকর্তা এমকে নার্জারি বলেন, ‘‘আমাদের সব সংগ্রহশালাগুলিই নিয়মিত ভাবে পরিচর্যা করা হয়। বাড়িটির দোতলায় ফটো গ্যালারি। তাও পরিচর্যা করা হয়।’’ সুকনার সেই স্টেশন মাস্টারের ছোট্ট কাঠের দোতলা বাড়িটিতেই তৈরি করা হয় ছোট্ট সংগ্রহশালাটি। কিন্তু তা কোনও দিনই পেশাদারিত্বের সঙ্গে সংরক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ।