প্রখর তাপে শুকিয়ে গিয়েছে খাল বিল। শীর্ণকায় শরীর নিয়ে ধুঁকছে মহানন্দা। জল নেই ফুলহারের মতো নদীতেও। বৃষ্টির অভাবে নেমে গিয়েছে ভূগর্ভের জলস্তরও। যার ফলে নলকূপ বা পাম্পসেট অকেজো হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ এলাকাতেই।
নদীর জল কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে নদী থেকে জল তোলার একাধিক প্রকল্প। সব মিলিয়ে সেচের জল প্রায় অমিল। ফলস্বরূপ মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠের ফসল।
প্রবল দাবদাহে সঙ্কট দেখা গিয়েছে পানীয় জল নিয়েও। মালদহের চাঁচল মহকুমার ছ’টি ব্লকের অধিকাংশ এলাকাতেই এই সঙ্কট দেখা গিয়েছে। মহকুমা জুড়ে এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। জল সঙ্কটকে ঘিরে সমস্যার জেরে শুক্রবার মহকুমা প্রশাসনের তরফে জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়। দুপুরে প্রশাসনের ওই বৈঠকে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন কৃষি, কৃষি-যান্ত্রিক ও বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরাও।
চাঁচলের মহকুমাশাসক পুষ্পক রায় বলেন, ‘‘বোরোচাষ বাঁচাতে জল জরুরি। যা জল আছে তা দিয়েই কাজ চালাতে হবে।’’ তিনি আরও জানান যে বোরো চাষ বাঁচাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে ব্লক প্রশাসন ও পিএইচই দফতরকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিতে জলসেচ ও পানীয় জল উভয় ক্ষেত্রেই জলের অপচয় আটকানোর জন্য কৃষি দফতর চাষিদের সচেতন করতে প্রচার চালাবে। লো-ভোল্টেজের জন্য শ্যালো পাম্প চালানো যাচ্ছে না বলে চাষিরা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বলে দাবি করছে বিদ্যুত বন্টন সংস্থা।
সমস্যার কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, সবাই এক সঙ্গে শ্যালো পাম্প চালানোয় চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই ঘটনা এড়াতে একেকটি এলাকায় লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানাচ্ছেন এই সংস্থার কর্তারা। কৃষি, বিদ্যুৎ দফতরের পাশাপাশি ব্লক প্রশাসনের তরফেও চাষিদের কাছে ওই মূল সমস্যার কথা তুলে ধরতে মাইকিং-সহ লিফলেট বিলি করেও প্রচার চালানো হবে। বোরোধানে শ্যালো পাম্পসেট, গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রচুর জল ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভের জলস্তর নেমে যায় বলে দাবি দফতরের কর্তাদের। চাঁচল-২ ব্লক কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘বোরোচাষ না কমালে সার্বিক সমস্যা মিটবে না। বোরোচাষ বন্ধ করে ডাল চাষ করুন। গভীর নলকূপের ব্যবহার বন্ধ করুন।’’
চাষিদের কাছে তাঁরা এই আবেদন করবেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। নয়তো সেচের জলের পাশাপাশি পানীয় জলের সমস্যা অচিরেই ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে তাঁর দাবি। সেরকম ঘটলে ওই সমস্যা মেটানোর আর কোনও পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।