বর্ষার পরে ঘন সবুজ অরণ্য। তিন মাস অন্তরালে থাকার পরে আবার তার দুয়ার খুলছে আজ থেকে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
তিন মাস বন্ধ থাকার পরে আজ থেকে খুলছে উত্তরবঙ্গের অরণ্যেরগুলি। তবে এ বার পর্যটকেরা নতুন রূপ দেখবেন জঙ্গলের।
পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। পর্যটকদের জন্য জঙ্গলের দরজা খোলার সঙ্গেই এ বার বাড়তি উপহার রয়েছে, বেশ কিছু নতুন ঠিকানা-পরিষেবা। বহু চর্চিত ডুয়ার্সের মেগা ট্যুরিজম প্রকল্পের দরজা খুলেছে পুজোর আগেই। পুকুর ভরা মাছ, নতুন নজরমিনার, এমনকী উন্নততর মোবাইল পরিষেবার আশ্বাসও রয়েছে এ বারের পুজোর প্যাকেজে।
প্রতি বছরই বর্ষার তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি মেলে। গরুমারা, চাপড়ামারি থেকে জলদাপাড়া, মহাননদা বনাঞ্চল সর্বত্রই আপাতত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কাঠামবাড়ি জঙ্গল লাগোয়া পশ্চিম ডামডিমের আটটি কটেজ পর্যটকদের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ডুয়ার্সের মেগা ট্যুরিজম প্রকল্পের আওতায়। পুজোর দিনগুলিতে এই কেন্দ্রের বুকিঙের চাহিদা তুঙ্গে। চালসার কাছে সাতখাইয়া এলাকায় তৈরি হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামাগারও। পুজোর আগেই ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে।
নতুন ভাবে নেওড়া জঙ্গল ক্যাম্পকে সাজিয়ে ফেলেছে বন দফতর। দু’বছর পরে এ বারই পুকুর ভর্তি মাছ নিয়ে পর্যটকদের জন্যে অপেক্ষায় মৎস্য দফতরের আরণ্যক আবাস। ছুটি কাটানোর সঙ্গে মাছ ধরাও। ধূপঝোরা বিটের জঙ্গলে মূর্তি নদীর কাছেই নজরমিনার চলতি বছরে তৈরি হয়েছে। বন দফতরের তরফে পর্যটকদের পুজোর উপহার। সংস্কার করা হয়েছে জলপাইগুড়ি বনবিভাগের কলাখাওয়া নজরমিনারও।
আজ শুক্রবার ভোর থেকেই জঙ্গলে ঢোকার প্রবেশ টিকিট সংগ্রহে পর্যটকদের লম্বা লাইনের আশায় গরুমারা লাগোয়া লাটাগুড়ি বাজারের ব্যবসায়ীরাও। হোটেল, ক্ষুদ্র শিল্পের দোকানগুলোও ঝাড়পোঁচ শুরু হয়েছে। যে পথ দিয়ে পর্যটকেরা জঙ্গলে ঢুকবেন, সেই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশের আগাছা সড়ক কর্তৃপক্ষ কেটে সাফ করা দিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জঙ্গলের ভিতরে সরু কাঁচা পথ ফের সংস্কার করে গাড়ি চলার উপযুক্ত করেও গড়ে তোলা হয়েছে। উত্তর মণ্ডলের (বন্যপ্রাণ) বনপাল সুমিতা ঘটক বলেন, ‘‘জঙ্গল খোলার আগে সংস্কারের কাজও শেষ হয়ে গেছে।’’
পর্যটকদের জন্য সুখবর জানিয়েছেন রিসর্ট এবং গাড়ি ব্যবসায়ীরা। রিসর্ট মালিকেরা দর না বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন। লাটাগুড়ি রিসর্ট মালিক সংগঠনের সচিব দিব্যেন্দু দেব এবং ধূপঝোরা মূর্তি এলাকার রিসর্ট মালিক সংগঠন গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়রা জানিয়েছেন, গত পুজোয় যে দর ছিল, তাই থাকবে।
জয়ন্তীতে মোবাইল সংযোগ নিয়ে অভিযোগ ছিল পর্যটকদের। এ বার জয়ন্তীতে মোবাইলের সঙ্গে ইন্টারনেটের পরিষেবাও মিলবে বলে দাবি। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী জয়ন্তীতে এসে এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসানোর তদারকির নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে দু’টি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থা টাওয়ার বসিয়েছে। ইন্টারনেটও চলছে বলে দাবি। পুজোর ছুটিতে তাই জঙ্গল-চা বাগান-নদীকেও ফ্রেমে রেখে তোলা সেলফি সঙ্গে সঙ্গে আপলোড করা যাবে ফেসবুকে।