প্রতীকী ছবি
বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হয়ে তিন বার তিনি কাউন্সিলর হয়েছেন। ২০০৫ সালে এক বার প্রায় এক বছরের জন্য ইংরেজবাজার পুরসভার পুরপ্রধানও হন। ২০১৬ সালে বাম ও কংগ্রেসের সমর্থনে ইংরেজবাজারের বিধায়কও হয়েছেন। পরে তিনি ‘অ্যাসোসিয়েট’ সদস্য হিসেবে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৭ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত তিনিই পুরপ্রধান। অভিযোগ, দ্বিতীয় বারের জন্য পুরপ্রধানের চেয়ারে বসে দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশের কাছেই তাঁকে বার বার ‘হোঁচট’ খেতে হয়েছে। পুরসভা পরিচালনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বারবার ‘বিরোধ’ হয় প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর।
তিনি নীহাররঞ্জন ঘোষ। দলীয় সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই ১৫ জন কাউন্সিলর অনাস্থা আনেন। যদিও দলের রাজ্য নেতৃত্ব আস্থা রাখায় এখনও তিনি পুরপ্রধানই রয়েছেন। সামনেই পুরভোট। তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, গত লোকসভা নির্বাচনে একটি ওয়ার্ড বাদে ওই পুরসভার বাকি ২৮টি ওয়ার্ডে বিজেপি বিপুল ভোটে ‘লিড’ পায়। গত পুরভোটে নীহার যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছিলেন, সেই ওয়ার্ড এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কি সেই নীহারকে সামনে রেখেই পুরভোটে লড়াই করবে, নাকি সামনে আনবে বিকল্প মুখ— তা নিয়ে পুরভোটের মুখে শহর জুড়ে চর্চা চলছে। লোকসভা ভোটের ফলাফলে বিজেপির পালে হাওয়া থাকায় তিনি ওই দলে ভিড়বেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন। যদিও নীহার সে সব গুঞ্জন উড়িয়ে দাবি করেন, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত জানাবেন, তা তিনি মাথা পেতে নেবেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৌসম নুর বলেন, ‘‘কাকে দলের মুখ করে নির্বাচনে লড়াই হবে তা ঠিক করবে রাজ্য নেতৃত্ব।’’
দলীয় সূত্রে খবর, কৃষ্ণেন্দুকে হারিয়ে ২০০৫ সালের পুরভোটে প্রথম উত্থান নীহারের। সে বার ১৮ জুন পুরবোর্ড গঠনের দিন ভোটাভুটিতে নীহার পুরপ্রধান নির্বাচিত হন। কিন্তু ওই পদে তাঁর স্থায়িত্ব ছিল ২০০৬ সালের ২ জুন পর্যন্ত। এর পরে ২০১০ ও ২০১৫ সালে পুরভোটে নীহার নির্দল হিসেবে জয়ী হন। ২০১৬ সালে কৃষ্ণেন্দুকে হারিয়ে বিধায়ক হন নীহার। তার এক বছর পরে কৃষ্ণেন্দুকে হঠিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য পুরপ্রধানের দায়িত্ব পান।
তৃণমূলের অন্দরের আলোচনা, দলের যে সমস্ত কাউন্সিলরদের ‘সহযোগিতা’ নিয়ে কৃষ্ণেন্দুকে সরিয়ে তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য পুরপ্রধানের চেয়ারে বসেছিলেন, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই কাউন্সিলরদেরই একাংশের ‘বিরোধিতার’ মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে দলেই অনাস্থা আসে। রাজ্য নেতৃত্ব তা ধামাচাপা দেন।
দলের কাউন্সিলরদের একাংশের বক্তব্য— নীহারকে পুরভোটের মুখ করা হলে দলীয় সভায় তার বিরোধিতা করা হবে। নীহার ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরদের বক্তব্য, এত কিছুর পর দল যখন নীহারের উপরেই আস্থা রেখেছে তখন দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।