বার্তা: বিয়ের আসরে সিএএ বাতিলের ডাক। নিজস্ব চিত্র
পাত্র হিন্দু। পাত্রী মুসলিম। ছাদনাতলায় এক হল চার হাত। নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যখন ভেদাভেদের অভিযোগে দেশজুড়ে অশান্তি। তা দূরে সরিয়ে এ ভাবেই সম্প্রীতির বার্তা দিলেন বালুরঘাটের অযোধ্যা গ্রামের সুকান্ত মণ্ডল ও রূপালি।
বুধবার রাতে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে এনআরসি আর সিএএ-র বিরুদ্ধে হাতে পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদও জানালেন নবদম্পতি। ভিন্ ধর্মের দু’জনের বিয়েতে নানা আপত্তি এড়িয়ে এমন পরিণয়ে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের বিরুদ্ধে জোরাল বার্তা গেল বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই বিয়ের কথা ‘ভাইরাল’ হয়েছে সোশ্যাল মাধ্যমেও।
পরিজন-পড়শিরা জানান, সিভিককর্মী সুকান্তের সঙ্গে ডাঙা এলাকার প্রথম বর্ষের কলেজছাত্রী রূপালি মণ্ডলের পরিচয় ‘ফেসবুকে’। দু’বছর ধরে সম্পর্কের পরে দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সুকান্তের বাবা কৃষিজীবী বিমল মণ্ডল ও মা বাবলি ছেলের ওই প্রস্তাবে আপত্তি করেননি। কিন্তু রূপালির পরিবার প্রথমে ওই বিয়েতে রাজি হননি।। কৃষিজীবী সোলেমান মণ্ডল ও মা বুলি প্রথমে মেয়ের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও পরে হার মানেন।
মঙ্গলবার সুকান্তর অযোধ্যা গ্রামের মাটির দেওয়াল, টিনের ছাউনির বাড়ি আলো-ফুল-মালায় সেজে ওঠে। আত্মীয়, পড়শিরা উৎসবে মেতে ওঠেন। হিন্দুমতে মন্ত্রোচ্চারণে হয় বিয়ে। রাতে প্রীতিভোজে নবদম্পতি সকলের কাছে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেন। এনআরসি ও সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাতে পোস্টার তুলে প্রচার করেন তাঁরা।
নবদম্পতির ওই অভিনব প্রচারে অনুষ্ঠান আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বলে জানান স্থানীয় তৃণমূল নেতা মহেশ পারেখ। তাঁর কথায়, ‘‘সভা সমিতিতে অনেকের মুখে এখন হিন্দু ও মুসলিম ভাই ভাই। কোনও ভেদাভেদ নেই বলে বক্তৃতায় শোনা যায়। সুকান্ত ও রূপালি কিন্তু বাস্তবে সকলের কাছে ওই বার্তা তুলে ধরলেন।’’ রূপালির কথায়, ‘‘ওঁর সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার সময় জাতপাত ও ধর্মের কথা ভাবিনি। আমরা দু’জনেই এ দেশের নাগরিক। এটাই বড় পরিচয়।’’
মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানে আসেননি রূপালির বাবা ও মা। তবে সুকান্তের বাবা বিমলবাবু বলেন, ‘‘ছেলের ভাল চাই। ও বৌমাকে নিয়ে সুখে থাকতে চায়। সেই সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েছি।’’ সুকান্ত অবশ্য রূপালির বক্তব্যই তাঁর কথা বলে লাজুক হেসে সরে যান।