মুক্তিপাড়া ইউনিট সর্বজনীনের অলিম্পিক ভিলেজের মডেল তৈরি চলছে। — নিজস্ব চিত্র
আপনি রিও-তে যাননি। যাননি আপনার পড়শিও। তবে ফালাকাটায় একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন আস্ত অলিম্পিকটাই।
থরে থরে সাজানো বিভিন্ন খেলার কোর্ট। ২০৫টি দেশের পতাকায় মোড়া অলিম্পিকের আসর। থাকবে অলিম্পিকের যাবতীয় তথ্যও। বিশেষ করে অলিম্পিকে দেশের নারী শক্তির জয়। দীপা, সাক্ষী, সিন্ধুদের লড়াই। ৩০ হাজার ফেলে দেওয়া জলের বোতলে ১১৮টি খেলোয়ারের মডেল তৈরি করা চলছে। ৫৮ তম মুক্তিপাড়া ইউনিটের পুজোয় মণ্ডপে যা সাজিয়ে তুলবেন কমিটির সদস্য-সদস্যারা। আরও আছে। ৫৮ তম মুক্তিপাড়া ইউনিট সর্বজনীন পুজোয় শুধু নিজেরাই নতুন কাপড় পরবে না, দুঃস্থ ছেলে-মেয়েদের জন্য কেনা হচ্ছে জামা-কাপড়।
মুক্তিপাড়া থেকে সোজা স্টেশন মোড়। তার কাছেই তৈরি হচ্ছে ৪০ তম কলেজপাড়া সর্বজনীন মণ্ডপে জঙ্গলের দৃশ্য। পুরো মণ্ডপের ভিতরে-বাইরে থাকবে জঙ্গল রক্ষা করার নানা ঘটনা। থামোর্কল কেটে তৈরী হচ্ছে গাছ ও বন্যপ্রাণীদের ছবি। কমিটির ভাবনায় সবুজায়ন ও বন সংরক্ষণ করা। দেবী দুর্গাও এখানে বনদুর্গার ভূমিকায়। গাছ-জঙ্গল ভেদ করে দেবী আসছেন গাছ কাটা চোরদের ত্রিশূল বিদ্ধ করতে। কয়েকটি অসুর গাছ চোরদের ভূমিকায়। এ ছাড়া কম্বল বিতরণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে প্রতিদিন।
আবার পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে ডুয়ার্সের বন জঙ্গল, নদী-নালা, জনজাতির পটভূমিতে ৫০তম বছরে মিল রোড সর্বজনীন। তাঁদের প্রতিমায় থাকবে পৌরাণিক দৃশ্য। সমুদ্রমন্থনের মধ্যে দিয়ে দেবীর আগমন। সেখান থেকে পথ ধরে আসুন থানার পিছনে ৪৫ বছরের মশলাপট্টি সর্বজনীনের কুলো, ফুল ও উল, সুতো দিয়ে বিশাল এক কাল্পনিক মন্দির ও আলোকসজ্জা।
এ ছাড়াও নজরকাড়া পুজো রয়েছে আরও। ৯৬ বছরের ফালাকাটা সিনেমা হলে দুর্গাবাড়ির বারোয়ারি, শীতলাবাড়ি, সুভাষপল্লি, রামকৃষ্ণ আশ্রম, দেশবন্ধুপাড়া, অরবিন্দপাড়া, যাদবপল্লি রয়েছে। রয়েছে সারদানন্দপল্লি, সুভাষ কলোনি, গোপনগর, আশুতোষপল্লি, মাদারি রোড, এসএসবি ছাউনির পুজো। ভুটনির ঘাটে হচ্ছে শতবর্ষপ্রাচীন দুর্গাপুজো। শুধু পুজোই নয়, উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় বিসর্জনের মেলাও বসে ফালাকাটায়। এক সময় ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তের শত শত প্রতিমা ফালাকাটার দশমীঘাটে বিসর্জন হত। যদিও এখন বিভিন্ন জায়গায় দশমীঘাট হওয়াতে প্রতিমার সংখ্যা কমে গিয়েছে।
তবে পুজো বহু হলেও একটি ঐতিহ্য প্রায় সব কমিটির এক সুরে বাঁধা। যত বাহারি মণ্ডপ তৈরী হোক, তারপরেও সব পুজো কমিটি স্থায়ী মণ্ডপে দেবীর আরাধনা করেন। মশলাপট্টি সর্বজনীন পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক গদাই দে ও মুক্তিপাড়া ইউনিটের সম্পাদক অভিজিৎ রায় বলেন, “স্থায়ী মণ্ডপ ঘেঁষে বাইরেই তৈরি হয় নজরকাড়া সব অস্থায়ী মণ্ডপ। যে কমিটি যত বড় বাজেটের পুজো করুক না কেন, সব কমিটির মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখাও ফালাকাটা ছোট শহরের বরাবরের ঐতিহ্য।”