—ফাইল চিত্র।
বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনে লাইন দিয়ে ঢুকে প্রথমে বোর্ডিং পাসের জন্য কাউন্টারে হুড়োহুড়ি। তা মিটলে শুরু হয় সিকিউরিটি চেকের জন্য দ্বিতীয় দফার লাইন। অনেক সময়ই ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে গেলেও সিকিউরিটি চেকের পরে চেয়ারের খোঁজে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করতে হয়। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই ঘণ্টাখানেক ঘুরে বেড়ান সিকিউরিটি হোল্ড এলাকায়। কেউ কেউ আবার জানলার বড় কাচের নীচে সামান্য এগিয়ে থাকা কংক্রিটের উপরে বসে পড়েন। বাগডোগরা বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবনে স্থানাভাবে রোজই এমন ছবি।
বাগডোগরা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন যাঁরা, তাঁদের কেউ কেউ বলছিলেন, গত কয়েক বছরে বিমান বেড়েছে। সময়ও বেড়েছে বিমানবন্দর খোলা রাখার। কিন্তু টার্মিনাল ভবনের বহর বাড়েনি।
যাত্রীদের এই বক্তব্য মেনে নিচ্ছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমেছেন এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) অফিসারেরা। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এই অবস্থায় রানওয়ের দিকের টার্মিনাল বিল্ডিং-এর সামনে এবং টরম্যাকের পিছনের এলাকায় ৮২২ বর্গমিটার নতুন ফ্লোর তৈরির কাজ চলছে। দু’মাসের মধ্যে কাজ শেষ হলে তা পুরনো টার্মিনালের সঙ্গে জুড়ে যাবে। তাতে বিমানবন্দরের সিকিউরিটি হোল্ড এলাকার যাত্রী ধারণের ক্ষমতা ৪৫০ থেকে বেড়ে হবে সাড়ে ৬৫০। নভেম্বরের শুরুতে নতুন ফ্লোর উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছে এএআই কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা সুব্রমণী পি বলেন, ‘‘যাত্রীদের পরিষেবা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে পুরনো টার্মিনাল ভবনকে ঘিরে জায়গা বার করার চেষ্টাই চলছে। নতুন কিছু এলাকা সংযুক্তিকরণের চেষ্টাও চলছে। নভেম্বরে কাজ শেষ হতে পারে।’’
বাগডোগরা সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে বিমানের সংখ্যাবৃদ্ধি শুরু হতেই টার্মিনাল ভবনকে নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে, দুপুর ১২টা থেকে ৫টা অবধি গেটের থেকে সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়া অবধি লাইন পড়ে যায়। অনেক যাত্রীই দেড়-দু’ঘণ্টা আগে পৌঁছে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। শৌচালয়, রেস্তরাঁ, বসার জায়গা নিয়ে সমস্যা আরও বাড়ে। তাই বছর দুয়েক আগে সিকিউরিটি হোল্ড এলাকা থেকে রেস্তরাঁ সরিয়ে দেওয়া হয়। টার্মিনাল ভবনের সামনের দিকে আলাদা করে রেস্তরাঁ তৈরি হয়। এতে খানিকটা এলাকা বাড়ে।
এখন ৩৭ জোড়া বিমান ওঠানামা করে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে। বিশেষ করে ঘণ্টায় ৩ হাজারের মতো যাত্রী ধারণ করার টার্মিনালে কোনও কোনও সময় ৪-৫ হাজার যাত্রী থাকছেন। তাতে ঠাসাঠাসি ভিড় হয়ে যায় বলে অভিযোগ। এএআই-র কয়েক জন অফিসার জানান, টার্মিনাল ভবনের বদলে চত্বর শপিং মলের মতো চেহারা নেয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও বাড়ানো হয়েছে। কিছু একসঙ্গে অন্তত দু’টি বা তিনটি বিমানের যাত্রীদের সিকিউরিটি হোল্ডের এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করাটা জরুরি। তাই আয়তন বাড়ানো হচ্ছে। তবে কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রথমে বিপত্তিতে পড়েছিল এএআই। কয়েক মাস আগে নতুন ফ্লোর ঢালাইয়ের সময় তা খুলে পড়ে কয়েক জন শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। পরে বিভাগীয় তদন্তের পর আবার কাজ শুরু হয়েছে।
বিমানবন্দরের অফিসারেরা জানান, আপাতত এই এলাকা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ছাড়াও নতুন টার্মিনাল ভবনের জমির অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত শুরুর চেষ্টা চলছে। এই আর্থিক বর্ষে মার্চে যাত্রী সংখ্যা ২৮-৩০ লক্ষ হয়ে যাবে, মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।