সাবধানতা: পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে। নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই নিট পরীক্ষা দিলেন অনেকে। উত্তরবঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল শিলিগুড়িতে। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে মালদহ, কোচবিহার, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়িতে পরীক্ষা দিতে এসে চরম দুর্ভোগ হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অনেকেই।
যেমন ৬ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে রবিবার ভোরে রায়গঞ্জ থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে রওনা হয়েছিলেন সংকেত। রাস্তার জন্য তাঁরা বিপাকে পড়েন। ডালখোলায় যানজটে দু’ঘণ্টা আটকে পরেন তাঁরা। বেলা ২ টায় পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে পৌঁছন পরীক্ষাকেন্দ্রে। মা রূপাদেবী বলেন, ‘‘ডালখোলায় যানজটে আটকে মনে হচ্ছিল পরীক্ষা বুঝি আর দিতে পারবে না। ফেরার সময় কখন পৌঁছব জানি না।’’
মালদহের মঙ্গলবাড়ির বাসিন্দা বৈশালী সাহা। ১০ হাজার টাকায় ছোট গাড়ি ভাড়া করে মা মুক্তিদেবীর সঙ্গে শনিবার শিলিগুড়ি আসেন তিনি। সকাল ৭ টায় রওনা হয়ে খারাপ রাস্তার জন্য দুর্ভোগে পড়েন। আট ঘণ্টা লেগেছে তাঁদের শিলিগুড়িতে পৌঁছতে। শরীর এতটাই খারাপ হয়েছিল যে রাস্তায় নাগাড়ে বমি করেছেন মা ও মেয়ে। এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ পৌঁছন পরীক্ষাকেন্দ্রে। করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষার চার-সাড়ে চার ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা শুরু হওয়ায় পরে রাস্তার ধারে, দোকানের বারান্দায় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে অভিভাবকদের। মুক্তিদেবী বলেন, ‘‘পরীক্ষা দিতে কী ভাবে যে আসতে হল তা শুধু আমরাই জানি। জেলাতে কেন্দ্র করা হলে অনেক নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারত সকলে।’’ বুনিয়াদপুর থেকে গাড়িভাড়া করে শনিবার মেয়ে সুদেষ্ণাকে নিয়ে এসেছেন রজত ঘোষ। গাড়িতে তিনজন পরীক্ষার্থী এক সঙ্গে এসেছেন। তাঁদেরও সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ।
মালদহের রতুয়ার পরাণপুরের বাসিন্দা প্রদীপ দাস জানান, ১০ সেপ্টেম্বর পদাতিক এক্সপ্রেসে এসেছেন। ভোর পাঁচটায় স্টেশনে আসতে ১ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল। শিলিগুড়িতে তিনদিন ধরে হোটেল আছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন পদাতিকে ফিরব। গভীর রাতে স্টেশনে নেমে ভাড়া গাড়িতে বাড়ি ফিরতে ভোর হয়ে যাবে।’’
কোচবিহারের দিনহাটার পাটাকুড়ার বাসিন্দা কেয়া দেব পরীক্ষা দিতে এসেছেন শিলিগুড়িতে। পরীক্ষার আগে পরপর দু’দিন লকডাউনের কথা ছিল। পরে একদিন বাতিল হয়। তা জানার আগেই ১০ সেপ্টেম্বর সকালে মা অর্চনাদেবীর সঙ্গে সরকারি বাসে শিলিগুড়ি রওনা দেন কেয়া। মাঝপথে রাস্তার বেহাল অবস্থায় বাসযাত্রা কষ্টকর ছিল বলে জানান তাঁরা। ময়নাগুড়ির পর থেকে রাস্তা ভয়ঙ্কর খারাপ বলে তাঁদের অভিযোগ। অর্চনাদেবীর কথায়, ‘‘পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হচ্ছিল। তারপর যদি এই পরীক্ষা দিতে না পারে তা হলে আবার হতাশ হয়ে পরবে মেয়ে।’’ ১৫০-২৫০ কিলোমিটার দূর থেকে যারা এসেছেন সকলকেই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ।
ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির তরফে জানানো হয়, শিলিগুড়িতে ২৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মোট পরীক্ষার্থী ৯২৭৬ জন। এ দিন ৮২ শতাংশ উপস্থিতি ছিল।