তেলিপাড়া থেকে গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলপাইগুড়ি আদালতে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র23
রক্তচন্দন কাঠ উদ্ধারে নাম জড়িয়ে গেল কোচবিহারের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহের। শুরু হল রাজনৈতিক চাপান-উতোর। বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘ভূষণ সিংহের বাড়ির পাশের মার্কেট থেকেই ওই কাঠ মিলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘আইন আইনের পথেই চলবে। ভূষণ সিংহ দলের কেউ নন। উনি বিধানসভার আগে বিজেপিতে যোগ দেন।’’
শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিং মার্কেটের একটি ঘর থেকে বৃহস্পতিবার প্রায় তিন কুইন্টাল রক্তচন্দন উদ্ধার করে বন দফতর। যার খোলা বাজারে দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ওই মার্কেট ভূষণেরই তৈরি বলে দাবি বাসিন্দাদের একাংশের। মার্কেট লাগোয়া একটি বহুতলের তিন তলায় থাকেন ভূষণ। তিনি ওই বহুতলটির মালিক বলেও জানান বাসিন্দারা। যদিও ঘটনার পরে, ভূষণকে পাওয়া যায়নি। তাঁর দু’টি মোবাইলের ‘কল ফরওয়ার্ড’ করা ছিল। মেসেজ করা হলে জবাব মেলেনি। বহু তলে তাঁর অফিস ছিল তালাবন্ধ। সেখানে এক যুবক বলেন, ‘‘ভূষণ সিংহ সাত দিন আগেই কলকাতায় গিয়েছেন।’’
কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘বিষয়টি বন দফতরের। তারাই জানাবেন।’’ জানা গিয়েছে, ২৫ অগস্ট ডুয়ার্সের তেলিপাড়া থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের নাম, ত্রিলোকিপ্রসাদ জয়সওয়াল ও নির্মল দাস। ত্রিলোকি হাসিমারার ও নির্মল কোচবিহারের সোনারি কাকরিবাড়ির বাসিন্দা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই সিং মার্কেটের খোঁজ পান বন আধিকারিকেরা। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘‘দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেখান থেকে কাঠ উদ্ধার হয়েছে, সে স্টলটি কার নামে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মার্কেটের ওই ঘর নিয়ে বন দফতর স্পষ্ট কিছু না জানালেও, শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। ভূষণ তৃণমূল থেকে জিতেই পুরপ্রধান হয়েছিলেন। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে, শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। ভোটের পরে, বিজেপি ছেড়ে দেন। তৃণমূলে ফিরতে আবেদনও করেন। পরে, পুর-নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন।
রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, কোন পথে এই কাঠ পৌঁছচ্ছে কোচবিহারে? কারণ, উত্তরবঙ্গ বা অসমের কোনও বনাঞ্চলে রক্ত চন্দন মেলে না। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর জঙ্গলে তা পাওয়া যায়। ওই রাজ্য থেকে ডিম-মাছ নিয়মিত আসে। সন্দেহ করা হচ্ছে, তার আড়ালেই কাঠ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কোচবিহারে। কোচবিহার থেকে সীমান্ত টপকে ওই কাঠ বিদেশে পাচারের চেষ্টাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তা নিয়ে চলছে তদন্ত।