প্রতীকী চিত্র
চারদিকে লোকের ভিড়। চিতায় কাঠের উপর শায়িত মরদেহ৷ আগুন ধরানোর আয়োজনও সারা৷ মুখাগ্নি করতে গিয়ে আচমকা পিছন থেকে ছেলের চিৎকারে হাত থেকে জলন্ত চ্যালাকাঠ খসে পড়ল বাবার। ‘‘বোনকে পুড়িয়ে ফেলো না। যতক্ষণ না কেসের ফয়সালা হচ্ছে, ওকে মাটিতে পুঁতে রাখো।’’
পঞ্চায়েত ভোটের দিন নিখোঁজ রাজকুমার রায়ের দেহ এ ভাবেই না পুড়িয়ে পুঁতে রেখেছেন তাঁর পরিজনেরা। দাড়িভিটে স্কুল গোলমালের সময় গুলিতে নিহত রাজেশ সরকার, তাপস বর্মণের দেহও না পুড়িয়ে পুঁতে রাখা হয়েছে। রাজেশ, তাপসের পরিজনেরাও চান, ফের ময়নাতদন্ত হোক। তা হলেই জানা যাবে, পুলিশের গুলিতেই ওই দু’জন মারা গিয়েছেন কি না।
সেই প্রবণতা এ বারে দেখা গেল, ময়নাগুড়িতে জল্পেশের মাঠে যে কিশোরীর দেহ পাওয়া গিয়েছিল, তার ক্ষেত্রেও। বুধবার বিকেলেই ময়নাতদন্তের পর মৃত কিশোরীর দেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু রাতে দাহ করার ঠিক আগ মুহূর্তে ওই কিশোরীর দাদার আপত্তিতে চিতা থেকে নামিয়ে দেহটি কবর দেওয়া হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোথায় তাকে কবর দেওয়া হল সে ব্যাপারে কিশোরীর পরিবার চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। পুলিশও এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পুলিশের উপর আর ভরসা করতে পারছে না মৃতার পরিবার? নাকি কিশোরীর দেহ মাটিতে পুঁতে আগামি দিনে সিবিআই তদন্ত দাবি করবেন তাঁরা?
কিশোরীর মামা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম হেলাপাকড়িতেই দেহটি দাহ করতে। কিন্তু পরে ভাবলাম আমার ভাগ্নি ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছে। তা ছাড়া অভিযুক্তরা এখনও ধরা পড়েনি। তাই তদন্তের স্বার্থে ফের হয়ত তার দেহ পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সে জন্য আপাতত দেহটি মাটিতে পুঁতে রেখেছি।’’
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘‘ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ জানাতেই মঙ্গলবার থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি নিরক্ষর বলে এক মুহুরিকে দিয়ে এফআইআরটি লেখাতে হয়। অথচ বারবার বলা সত্ত্বেও ওই মুহুরি এফআইআরে ধর্ষণ কথাটি উল্লেখ করেননি। এফআইআর জমা দেওয়ার পর ঘটনাটি নজরে আসে।’’ তাই তিনি আশঙ্কা করছেন, তাঁর মেয়ের মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে কেউ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়তেও পারেন।
কিশোরীর প্রতিবেশীরা জানান, যে যুবকের বিরুদ্ধে মেয়েটিকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে সেই যুবক এলাকারই এক তৃণমূল নেতার আত্মীয়। তবে দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার হেলাপাকড়ি বাজারে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে এলাকার একটি ক্লাব।
যদিও পুলিশের দাবি, অভিযুক্তরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। জলপাইগুড়ির ডিএসপি মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের ধরতে সব রকমের চেষ্টাই চলছে। আশা করছি তারা দ্রুত ধরা পড়বে।’’