হেফাজতে: আদানতে তোলা হচ্ছে অভিনন্দন সাহাকে। —নিজস্ব চিত্র।
বনিবনা একেবারে তলানিতে ঠেকায় তর্কাতর্কির সময় স্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে মারার হুমকিও অভিনন্দন দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। জোড়া খুনের তদন্তে নেমে তেমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, মা ও মেয়ের খুনের ঘটনার কিছুদিন আগে পাঁচকেলগুড়ির ওই বাড়িতে বেশ কয়েকদিন এক কাঠের মিস্ত্রি বিভিন্ন কাজ করেছিলেন। পরিবারের স্বামী-স্ত্রী গোলমালের সময় তিনি নানা কথা শুনেছিলেন। তেমনিই, বিভিন্ন কাঠের ও কাঁচের জানলা ওই মিস্ত্রি ঠিক করিয়ে ছিলেন অভিনন্দন। এর থেকেই বেশ কিছুই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। এনজেপি এলাকার বাসিন্দা, ওই কাঠমিস্ত্রির বয়ান আদালতে নথিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া পুলিশ শুরু করেছে। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার গৌরব লাল (পূর্ব) বলেছেন, ‘‘জেরা এবং তদন্তে নানা দিক উঠে আসবে।’’
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ও মেয়েকে খুনের অভিযোগে ব্যবসায়ী অভিনন্দনকে এনজেপি থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। বুধবার তাকে জলপাইগুড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। বিচারক অভিযুক্তের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারীদের অনুমান, স্ত্রীকে ছেড়ে নতুন করে আবার পছন্দ মাফিক বিয়ের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন অভিনন্দন। এ দিন দুপুর দুটো নাগাদ অভিনন্দনকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয়৷ কোনও কথারই উত্তর দেননি তিনি। সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই পাশবিক খুনের ঘটনার আরও অনেক তদন্তের প্রয়োজন৷ সেই সঙ্গে এই ঘটনার পুননির্মাণের প্রয়োজনও রয়েছে৷ তাই ধৃতকে চোদ্দোদিনের পুলিশ হেফাজতে রাখাটা দরকার৷’’
অভিনন্দনের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি৷ এ নিয়ে বিচারক জিজ্ঞাসা করলে এজলাসে উপস্থিত অভিনন্দনের মামা সাধনচন্দ্র সাহা দাবি করেন, পরবর্তী শুনানির দিন অভিনন্দনের আইনজীবী থাকবেন৷ পরে সাধনবাবু জানান, অভিনন্দন নির্দোষ। বিয়ের পর থেকে অভিনন্দনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বনিবনা হতে সমস্যা হচ্ছিল৷ কিন্তু গত চার-পাঁচ বছর ধরে তাদের সম্পর্ক একে বারেই ভাল ছিল৷ ব্যবসার জন্য অভিনন্দন দোতলা বাড়ির উপর তলায় সময় করে খেতে যেতে পারত না। স্ত্রী রীতা নিজে হাতে চা, খাবার তৈরি করে অভিনন্দনের জন্য দোকানে নিয়ে যেতেন৷ এমনকী, মাঝেমধ্যেই তাঁর ব্যবসার নানান দিকও সামলাতেন৷ সাধনবাবু বলেন, ‘‘অভিনন্দনের ব্যবসার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ ওকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।’’
গত সপ্তাহে পাঁচকেলগুড়ির ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে মা ও মেয়ের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ছোট ছেলে অসিত অবশ্য অক্ষত ছিল। অভিনন্দন বাড়িতে ডাকাত পড়ার কথা পুলিশ ও পড়শিদের জানান। কিন্তু তদন্তে সন্দেহ তাঁর দিকেই যেতে থাকে। শেষে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।