হাতেহাত: মনোনয়ন জমা দিলেন মৌসম, অর্পিতা। নিজস্ব চিত্র
আসন্ন পুরভোটেই হতে চলেছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি হিসেবে অর্পিতা ঘোষের নেতৃত্বে জেলার প্রথম নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে দলকে জিতিয়ে এনে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমাণ করতে মরিয়া তিনি। তাই পুরভোটে অর্পিতার বাজি এবার ‘স্বচ্ছ, শিক্ষিত নেতা’। বালুরঘাট পুরসভার বিদায়ী বোর্ডে দলের একাধিক কাউন্সিলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগকে সরিয়ে রেখে দলকে জেতানোই এখন তার কাছে চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় দলের ও নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে অর্পিতার সাফ কথা, ‘‘কে পাশে ঘুরছে, সেটা দেখে লাভ নেই। যাঁরা স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ, তাঁদেরই টিকিট দেওয়া হবে।’’
গত পুর নির্বাচনে বালুরঘাট পুরসভার ২৫টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে জয়ী হয়ে প্রথমবার বামেদের কাছ থেকে এই পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। সেই বোর্ডের প্রথম পুরপ্রধান হয়েছিলেন চয়নিকা লাহা। কয়েক বছর পরে চয়নিকার মৃত্যুর পরে পুরপ্রধান হয় রাজেন শীল। প্রায় দেড় বছর আগে বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার পর থেকে প্রশাসক বসেছে পুরসভায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিদায়ী পুরপ্রধান রাজেনের সময়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হয় পুরবোর্ড। দলের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ঘর ‘পাইয়ে দেওয়ার’ নামে টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে। আর্থিক দুর্নীতি করে পুরসভার জায়গা লিজ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এমনকি রাস্তা নির্মাণ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করতে দলের কয়েক জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে সরগরম হয় শহর। যা নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় জেলা নেতৃত্বকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার কথায়, ‘‘আসন্ন পুরভোটে এই নেতাদের টিকিট দেওয়া হলে দলের ভরাডুবি নিশ্চিত৷ বালুরঘাটের মতো সংস্কৃতির শহরে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের কেউ ভোট দেবে না। তাই জেলা নেতৃত্ব তাঁদের বাতিল করতে শুরু করেছেন।’’
সূত্রের খবর, দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফেরাতে জেলা সভাপতি হয়েই ‘কড়া’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্পিতা। ইতিমধ্যেই বিদায়ী পুরপ্রধান রাজেন শীল থেকে শুরু করে বেশ কয়েক জন বিদায়ী কাউন্সিলরকে দলের সমস্ত কর্মসূচী থেকে ‘ছেঁটে ফেলা’ হয়েছে দাবি দলেরই একাংশের। এমনকি সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতেও তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকেও নাকি তাঁদের দূরে রাখা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে এই নেতাদের টিকিট দেওয়া হলে দলের পরাজয় নিশ্চিত জেনে তাই নতুন মুখ খুঁজছেন অর্পিতা, বলছে দলের একাংশ।
অর্পিতা বলেন, ‘‘কে টিকিট পাবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দল। তবে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কোনও নেতাকেই টিকিট দেওয়া হবে না। যাঁরা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ, যাঁরা শিক্ষিত, যাঁরা শহরের উন্নয়ন চায়, যাঁরা দলের গাইডলাইন মেনে চলবেন, তাঁদেরই খোঁজ করা হচ্ছে।’’
দলের একাংশের বক্তব্য, এই ভাবেই দলের ‘শুদ্ধকরণ’ শুরু করেছেন অর্পিতা। কিন্তু অন্দরমহলের খবর, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা একগুচ্ছ নেতাকে ‘বাদ’ দেওয়া হলে নির্বাচনের সময়ে তাঁদের একাংশ ‘তল কাটতে পারে’। এই অবস্থায় পুরভোটে স্বচ্ছ নেতাদের নিয়ে কী ভাবে অর্পিতা এগোন, সেটাই দেখার।