Mucormycosis

ছত্রাক-দেশে নয়া বিপদ মিউকরমাইকোসিস

উত্তরবঙ্গের জল-হাওয়া এবং ভৌগোলিক কাঠামো ছত্রাকের দ্রুত বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২১ ০৬:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছত্রাকবাহিত মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণ থাবা বসিয়েছে ছত্রাকের ‘আঁতুড়ঘরেই’।

Advertisement

করোনাকালে এই রোগটি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এই সংক্রমণ নিয়ে কয়েক জন ভর্তি। তাতেই বিশেষজ্ঞদের একাংশ উদ্বিগ্ন। যদিও অন্য অনেক ডাক্তারেরই দাবি, যথাযথ সচেতনতা থাকলে এই সংক্রমণ রোখা সম্ভব। তবু, করোনার মধ্যে ছত্রাকবাহিত রোগটি নতুন করে সমস্যা বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে কোচবিহার থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত পাঁচটি জেলায় মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের জন্য দায়ী ছত্রাকটি ছাড়াও ট্রেমেললা ফুসিফমিস নামে আরেকটি প্রায় একই ধরনের ছত্রাকের দেখা মেলে। সেটিও মানুষের শরীরে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। এই ছত্রাকটির আদি এবং একমাত্র বাসস্থান উত্তরবঙ্গ এবং দেশের উত্তর-পূর্ব অংশ। এই তথ্য তুলে ধরে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, বিশেষ করে এই পাঁচ জেলার জল-হাওয়া ছত্রাকের বেঁচে থাকা এবং বেড়ে ওঠার পক্ষে আদর্শ। তাই এখানে মিউকরমাইকোসিসের তাৎপর্য অন্য সব জায়গার তুলনায় আলাদা।

উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল জুড়ে এক একটি ছত্রাকের কয়েকশো করে প্রজাতি ছড়িয়ে রয়েছে। এমনও প্রজাতির ছত্রাক রয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে এখনও তেমন তথ্য নেই বিশেষজ্ঞদের হাতে। এমন অনেক ছত্রাক আছে, যেগুলির দেখা দেশের অন্যত্র মেলে না। তাই ছত্রাক নিয়ে গবেষণাকারীরা বারবার ছুটে এসেছেন উত্তরবঙ্গে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, উত্তরবঙ্গের জল-হাওয়া এবং ভৌগোলিক কাঠামো ছত্রাকের দ্রুত বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ।

Advertisement

রাজ্যের জীববৈচিত্র্য বোর্ডের সদস্য প্রকাশ প্রধান বলেন, “আমি মাশরুম নিয়ে কাজ করি। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের মাটিতেই দেড়শোরও বেশি রকমের মাশরুম খুঁজে পেয়েছি। যার মধ্যে বহু মাশরুম অখাদ্য তো বটেই, অতি বিষাক্তও। পছন্দ মতো আবহাওয়া পেয়ে বছরের পর বছর ধরে এই ছত্রাকগুলি উত্তরবঙ্গে বেঁচে রয়েছে শুধু নয়, বংশবিস্তারও করছে।” এখানকার পাহাড়ি বা জঙ্গল এলাকার বাসিন্দারা মাঠ থেকে মাশরুম তুলে এনে রান্না করে খেয়ে থাকেন। মাশরুমেরই মতো দেখতে ভুল ছত্রাক তুলে এনে খাওয়ার পরে বিষক্রিয়ায় একাধিক মৃত্যুরও সাক্ষী রয়েছে উত্তরবঙ্গ। দাবি করা হয়, কয়েক বছর আগে সামসিঙে একাধিক মৃত্যু হয়েছিল ভুল ছত্রাক খেয়ে।

প্রাণীবিদ্যার গবেষক রাজা রাউত বলেন, “ছত্রাকের পক্ষে আদর্শ আবহাওয়া হল ১০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকতে হবে ৪০ শতাংশ বা বেশি। শীত এবং শরৎকালের কয়েকটি দিন বাদে এখানকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৪০ শতাংশের অনেক বেশি থাকে।” এই আবহাওয়ার কারণেই এই সব জেলায় ছত্রাক দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। যেমন, এখন মে মাসের শেষে জলপাইগুড়ির বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৮ শতাংশ রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। তাই মিউকরমাইকোসিস নিয়ে উত্তরবঙ্গে বেশি সচেতনতা প্রয়োজন রয়েছে, দাবি বিশেষজ্ঞদের।

শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের তরফে নেওড়াভ্যালি জঙ্গলে পাঁচটি শিবির করে জীববৈচিত্র্যের সমীক্ষা করা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। ন্যাফের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, “উত্তরবঙ্গের সমতল থেকে পাহাড়, বনাঞ্চলে রাশি রাশি ছত্রাক ছড়িয়ে রয়েছে। আমাদের সমীক্ষক দলে ছত্রাক বিশেষজ্ঞের একটি দল ছিল। বহু নতুন ছত্রাক দেখা গিয়েছে, যেগুলির কথা আগে হয়তো জানাই ছিল না। বহু ছত্রাক এমন রয়েছে, যা মানুষ তো বটেই অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক। গোটা উত্তরবঙ্গই ছত্রাকের আঁতুড়ঘর বলা যায়।”

এই পরিবেশে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ কী চেহারা নিতে পারে, তার সঠিক ধারণা নেই কারও। তবে সচেতনতা নিয়ে প্রচার ও যথাযথ চিকিৎসা আটকে দিতে পারে এই সংক্রমণের সম্ভাবনা, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement