মঞ্চে: স্কুলের স্মারক হাতে কৃতী পড়ুয়াদের মায়েরা। নিজস্ব চিত্র
ইংরেজবাজার ব্লকের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা বেগম নেসা খাতুন। তাঁর বড়ছেলে মির রাশেদ আলি ১৯৯৬ সালে শোভানগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেছিলেন। স্কুল সূত্রে খবর, এখন তিনি রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ। বেগম নেসার ছোটছেলে ওই স্কুলেরই ছাত্র মির আজাদ কালাম এখন হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজের অধ্যাপক।
২০০২ সালে ওই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাস করেছিলেন শিবানী আহমেদের মেয়ে সীমা আহমেদ। সীমা এখন সাঁইথিয়া কলেজের অধ্যাপিকা। একই ভাবে ভবানীপুর গ্রামের লাইলি খাতুনের ছেলে মিনহাজ আনসারি এখন কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক।
স্কুলের এমন কৃতী অন্তত ২০ জন ছাত্রছাত্রীর মায়েদের মঙ্গলবার ‘মা তুঝে সালাম সম্মান’ জানাল শোভানগর হাইস্কুল। এ দিন স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চে সেই সব মায়েদের উত্তরীয় পরিয়ে, হাতে ফুল ও স্মারক তুলে দিয়ে সম্মান জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। সম্মান স্মারক তুলে দেন মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রতিভা সিংহ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আশিস কুণ্ডু, প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস।
স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর ওই স্কুল ‘যামিনী রায় পুরস্কার’ পেয়েছে। সেই পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা। সেই টাকার সুদ থেকে স্কুলের সাংস্কৃতিক প্রতিভা থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য ‘যামিনী রায় স্কলারশিপ’-ও এ দিন চালু করা হল। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তিন-চার জন ছাত্রছাত্রীকে ওই স্কলারশিপ দেওয়া হবে। মালদহের জেলাসদর ইংরেজবাজার শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শোভানগর হাইস্কুল। ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ওই স্কুল। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কো-এডুকেশন ওই স্কুলে এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। ২০১৪ সালে জেলাস্তরে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার ও ২০১৮ সালে জেলার সেরা হিসেবে রাজ্যস্তরে শিশু মিত্র পুরস্কার পায় এই স্কুল। এ বছর তারা পেয়েছে যামিনী রায় পুরস্কার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস বলেন, ‘‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ছোট থেকে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে গড়ে তোলার কাজ করেন তাদের মায়েরাই। সেই স্বীকৃতি জানাতেই এ দিন ২০ জন কৃতী ছাত্রছাত্রীর মায়েদের সম্মানিত করলাম। তাঁদের সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।’’
বেগম নেসা খাতুন বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। এক জন ডাক্তার হয়েছে, এক জন অধ্যাপনা করছে। কিন্তু ছেলেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্কুল যে আমাকে এত বড় সম্মান দেবে তা ভাবতেও পারিনি। আমি গর্বিত।’’