প্রতীকী চিত্র
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ট্রেনের সাধারণ কামরা। সেই আগরতলা থেকেই কার্যত তিলধারণের জায়গা ছিল না কোথাও। যে যেখানে পেরেছেন ঠাসাঠাসি করে বসেছিলেন। এরই মধ্যে সেই কামরার দু’টি শৌচাগারের মাঝে সন্তানের জন্ম দিলেন এক মহিলা।
অসমের নিউ বঙ্গাইগাঁও স্টেশনে ঢোকার মুখে এমন ঘটনার খবর পেয়ে আর দেরি করেননি ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কর্তব্যরত দুই টিকিট পরীক্ষক। পরের স্টেশনে ওই কামরায় পৌঁছন তাঁরা। এরপর নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে চিকিৎসককে দিয়ে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। আধঘণ্টা পর ছাড়া হয় ট্রেনটি।
রেল সূত্রের খবর, বিহারের কিউলের বাসিন্দা সুরেন্দ্র রাজবংশী আগরতলায় একটি ইট ভাটায় কাজ করেন। সেখানেই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন তিনি। জরুরি কাজে বাড়ি যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার সকালে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে শিয়ালদহমুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ওঠেন তিনি। ঠিক ছিল, মালদহে নেমে ট্রেন বদল করে অন্য ট্রেন ধরে কিউলে পৌঁছবেন তাঁরা। সংরক্ষিত আসনের টিকিট কাটতে পারেনি হতদরিদ্র পরিবারটি। সাধারণ কামরা ভিড়ে ঠাসাঠাসির মধ্যেই দুই শৌচাগারের মাঝে বসতে হয় তাঁদের। রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ ট্রেনটি নিউ বঙ্গাইগাঁও স্টেশনে পৌঁছনোর আগেই ওই গৃহবধূর প্রসব বেদনা ওঠে। অসহায় ওই মহিলার স্বামী ওই অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। সংরক্ষিত কামরায় তখন টিকিট পরীক্ষক হিসেবে ডিউটিতে ছিলেন অখিল রক্ষিত ও শ্যামানন্দ ঝাঁ।
অখিল বুধবার বলেন, ‘‘সাধারণ কামরায় এক গৃহবধূর প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে খবরটা জানতে জানতেই ট্রেন নিউ বঙ্গাইগাঁও স্টেশন ছেড়ে দিয়েছিল। এরপর বাসুগাঁওয়ে ট্রেন দাঁড়াতেই আমরা ওই কামরায় ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই মহিলা। কন্ট্রোলে গোটা বিষয়টা জানাই।’’
রেল সূত্রের খবর, ট্রেনটি নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে আসার প্রায় ৪৫ মিনিট আগে আলিপুরদুয়ার জংশন রেল হাসপাতালের চিকিৎসক নীলোৎপল নন্দী সেখানে পৌঁছে যান। প্রায় আধঘণ্টা ধরে মা ও শিশুটিকে পরীক্ষা করেন তিনি। ততক্ষণ ট্রেনটিকে ওই স্টেশনেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ওই চিকিৎসক পরে বলেন, ‘‘আচমকা ট্রেনের মধ্যে এমন একটা পরিস্থিতি হয়ে যাওয়ার পর ওই প্রসূতিকে আলিপুরদুয়ার জংশন হাসপাতালে ভর্তি হতে বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বা তাঁর স্বামী তাতে রাজি হননি। তবে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ ছিল।’’ রেল কর্তারাও জানিয়েছেন, মালদহ স্টেশনে নামার সময়ও মা ও শিশু সুস্থ ছিলেন।
আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম কেএস জৈন বলেন, ‘‘আমরা যাত্রীদের সুরক্ষার কথা সব সময়েই ভেবে থাকি। ট্রেনে কর্তব্যরত কর্মীদেরও সেটাই সব সময় বলা হয়। যে কাজটি কাঞ্জনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের রেলকর্মী ও চিকিৎসকেরা যথাযথ পালন করেছেন।’’