মায়ের কোলে রূপালি। — নিজস্ব চিত্র
ব্যাঙ্কের লাইনে হারিয়ে গিয়েছিল চার বছরের মেয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেলেন মা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরের মনিমেলা পার্কে স্টেটব্যাঙ্কের প্রধান শাখা কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে টাকা তুলতে ভিড় করেছিলেন বহু মানুষ। শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিপালী হালদারও তাঁর কন্যা চার বছরের রূপালিকে নিয়ে টাকা তুলতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিরাট লাইন পড়েছিল। আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল মেয়ে। লাইন একটু একটু করে এগোচ্ছিল। দুপুর ১টা নাগাদ খেয়াল করি মেয়ে পাশে নেই।’’ ততক্ষণে মাকে খুঁজতে খুঁজতে রূপালিও ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে নেমে পড়েছিল রাস্তায়।
ডিএম অফিস পেরিয়ে আদালতের দিকে শহরের ব্যস্ত ও প্রধান রাস্তায় একটি বাচ্চা মেয়েকে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে দেখে তিন সাংবাদিক সঞ্জয় রায়, রূপক সরকার এবং রাজা দাসের নজরে পড়ে।
তাঁরা শিশুটিকে কোলে তুলে নাম ঠিকানা জানতে চাইলে মেয়েটি প্রায় কিছুই স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। একটি বেসরকারি চ্যানেলের সাংবাদিক রূপক বলেন, ‘‘আঙুল তুলে মেয়েটি কোন দিকে বাড়ি দেখিয়ে শুধু বলেছিল সে ছাতু স্কুলে (অঙ্গনওয়াড়ি) পড়ে। মায়ের সঙ্গে কোথায় এসেছিল, তাও জানাতে পারেনি।’’
সঙ্গে সঙ্গেই ওই তিন যুবক ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপে শিশুটির ছবি এবং হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে দেন। এরপরেই শিশুটিকে নিয়ে তাঁরা চলে যান বালুরঘাট থানায়।
এ দিকে মেয়েকে হারিয়ে ততক্ষণে ব্যাঙ্কের মধ্যেই কান্নাকাটি শুরু করেন দিপালীদেবী। অন্যান্য গ্রাহকরাই তাঁকে ম্যানেজারের ঘরে নিয়ে যান। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার নিজস্ব লাউড স্পিকার থেকে রূপালির হারিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ঘোষণা করতে থাকেন। সে সময় ফেসবুকে মেয়েটির ছবি ও হারিয়ে যাওয়ার তথ্য দেখতে পেয়ে এক গ্রাহক ম্যানেজারের ঘরে ছুটে যান। ছবি দেখে দিপালীদেবী মেয়েকে চিনতে পারেন।
রূপালি থানায় রয়েছে জেনে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার আইসি-কে ফোন করেন। থানায় গিয়ে মেয়েকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ফেলেন দিপালীদেবী। জানান, স্বামী রিকশাচালক।
বাড়িতে মেয়েকে রাখার মতো কেউ নেই। তাই সঙ্গে নিয়েই ব্যাঙ্কে যেতে হয়েছিল। বললেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কি করে যে হারিয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। ভাগ্গিস ওই তিন যুবক ছিলেন। না হলে কি হতো ভাবতেই পারছি না।’’