Coronavirus

Durga Puja 2021: অচ্ছুতের অ-সুখে ওষুধ চেনা হাতের ওম-ই

যেখানে, যতখানি প্রতিবাদ করা উচিত, করতে পারি না। মুখ ঢাকা মাস্কে, চুপ থাকে কণ্ঠও।

Advertisement

অরিতা ধারা ভট্ট

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ০৭:২৪
Share:

ফাইল চিত্র।

‘ফুল ছুঁয়ে যায় চোখের পাতায়, জল ছুঁয়ে যায় ঠোঁটে’।

Advertisement

‘মাসিপিসি’ দের ভোর থেকে শুরু হওয়া জীবনযুদ্ধ কবির ভাষায় অন্যরকম হয়ে যায় এই ফুল-জলের স্পর্শে। আর মৃত্যুতেও যখন জীবনের যুদ্ধ শেষ হয় না, তখন দেহাবশেষ গুমরে মরে স্পর্শরহিত কলসিতে। উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ওই নির্যাতিতার মৃত্যু এবং তার পরবর্তী ঘটনাক্রম মনে করিয়ে দেয় সেই কথা।

স্পর্শ হল ইন্দ্রিয়ের উর্ধ্বে উঠে সেই ছোঁয়া, যা পাশে থাকা, ভরসা দেওয়ার কথা বলে। আবার একই শরীরে মুখ থেকে পায়ে লক্ষ যোজন ব্যবধান তৈরি করে দেয় এই স্পর্শের বেড়াজাল। মনু সংহিতা বলে, ‘সৃষ্টিকর্তা প্রজা বৃদ্ধি করার জন্য নিজের মুখ, বাহু, ঊরু ও পদ (পা) থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, পা থেকে শূদ্র।’ মাথা আর পায়ের এই ব্যবধানই হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারকে ঘটনার এক বছর পরেও সমাজের মূল স্রোত থেকে ব্রাত্য করে রাখে। সুবিচার না মেলা পর্যন্ত মেয়ের শেষকৃত্য না করার যে পণ তাঁরা নিয়েছেন, তা তাঁদের দূরে ঠেলে দেয় সমাজ-শাসন-রাজনীতির কেন্দ্র থেকে। মেয়েটির রোজের ব্যবহারের সেই সেলাই মেশিনে ধুলো জমে। মাটির কলসে ঢাকা দেহাবশেষে আর লাগে না স্নেহস্পর্শ। দলিত, তার উপরে নারী হওয়ার ‘অপরাধ’ জীবনের স্পর্শই কেড়ে নেয় তাঁর কাছ থেকে।

Advertisement

এ কিন্তু একুশ শতকেরই গল্প, যেখানে ছোঁয়া আর না-ছোঁয়ায় মিশে থাকে জীবন।

আসলে আমরা ছোট থেকেই ছোঁয়াছুঁয়ির গণ্ডীতে নিজেদের ‘বেঁধে বেঁধে’ রাখি। কোনও শিশুকে দেখলে আমাদের ইচ্ছে করে আদর করতে। বন্ধুকে ইচ্ছে করে আলিঙ্গন করতে। যাঁর দৃষ্টি নেই, যিনি কানে শোনেন না, এই স্পর্শ তাঁকে জীবনের রূপ, রস চিনতে সাহায্য করে। আর সাহায্য করে মেয়েদের, যাঁদের কাছে স্পর্শ আসে ভাল-মন্দের বিশেষণ বেয়ে। স্কুল থেকে পরিজন, বাস থেকে বস, বড় থেকে প্রায় বুড়ো হওয়া পর্যন্ত অনেকেই নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান। এই স্পর্শের ‘ভয়’ ফল্গু ধারার মতো অনেককে বয়ে নিয়ে যেতে হয় আজীবন।

আর গত দু’বছর ধরে ঘর, পৃথিবী যে রোগে ভুগছে সেখানে তো ভয় স্পর্শেই। হাতের ছোঁয়ায়, নিঃশ্বাসে ডালপালা ছড়াতে থাকে এই সংক্রমণ।

কোভিডে হারায় প্রিয়জন। মারণথাবা পড়লে সবার আগে নিষেধ হয় ছোঁয়ায়। গর্ভে বেড়ে ওঠা, দু’হাতে আগলে বড় হওয়া সন্তান একা কষ্ট পায় হাসপাতালে। মায়ের মন তাকে ছুঁয়ে থাকলেও ইন্দ্রিয় স্পর্শ করতে পারে না। যে হাত ধরে মানুষ হাঁটতে শেখে, সেই হাতও ছেড়ে দিতে হয়। স্নেহস্পর্শের অভাব দূর করতে ব্রাজিলের এক হাসপাতালে তাই ল্যাটেক্সের গ্লাভসে উষ্ণ জল ভরে কোভিড আক্রান্তের হাতে রাখা হয়। আক্রান্তের আচ্ছন্ন মন প্রবল ভাবে জীবনে ফিরতে চায় ‘চেনা’ হাতের ওম পেয়ে।

এমনই আবহে রাস্তাঘাটে স্পর্শ বাঁচিয়ে চলি আমরা। ঠিক যে ভাবে গা বাঁচাই চারপাশ থেকে। যেখানে, যতখানি প্রতিবাদ করা উচিত, করতে পারি না। মুখ ঢাকা মাস্কে, চুপ থাকে কণ্ঠও। ভিড় বাড়ে রাজনৈতিক সভায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে, উৎসবে। তখনকার ছোঁয়া ফের ঠেলে দেয় স্পর্শরহিত অ-সুখের দিকে। ছোঁয়া-না ছোঁয়ায় জুড়ে যায় সুখ, অসুখ, ভাল-মন্দ।

তার পর?

ফুল ছুঁয়ে যায় চোখের পাতায়...।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement