প্রতীকী ছবি।
মার্চ থেকে জুলাই। ক্যালেন্ডারের এই চার মাস আমে ভরে থাকে গাছ। আমের পাহারায় বাগানে বাগানে থাকে লোকজন। সেই মরসুম শেষ হলেই নির্জন হয়ে যায় বাগানগুলি। আর সে সব নির্জন বাগানই তখন হয়ে ওঠে অপরাধের ‘মুক্তাঞ্চল’। তবে শুধু আমই নয়, ফাঁকা চাষের জমিতেও চলে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা।
মালদহ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর। গত তিন মাসে কখনও আমবাগান, কখনও চাষের ফাঁকা জমিতে উদ্ধার হয়েছে দেহ। নৃশংস খুন দেখে শিউরে উঠেছে গৌড়বঙ্গের দুই জেলা। বাড়ি থেকে মেয়েরা বের হলে উৎকন্ঠায় থাকছেন পরিজনেরা। অনেকে বলছেন— ‘‘স্কুল, টিউশনে যেতে পেরোতে হয় নির্জন আমবাগান, ফাঁকা জমিও। ভয় থাকে তা নিয়েই।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৫ ডিসেম্বর ইংরেজবাজার ব্লকের কোতুয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধানতলা গ্রামের নির্জন আমবাগান থেকে উদ্ধার হয়েছিল শিলিগুড়ির এক তরুণীর দগ্ধ দেহ। ওই গ্রামের এক স্কুলছাত্রী জানায়, ‘‘আমবাগান দিয়েই গিয়েছে ধানতলা গ্রামের রাস্তা। সূর্য ডুবলেই অন্ধকার নেমে আসে সেই রাস্তায়। দিনেও নির্জন রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে বুক কেঁপে ওঠে।’’
কেন এমন ভয়? ছাত্রীর কথায়, ‘‘আমের মরসুমে বাগানে থাকে পাহারাদার, ব্যবসায়ীরা। বছরের অন্য সময় বাগান ফাঁকা থাকে। বাগানের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। আমের মরসুম ছাড়া বাগানে অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে।’’
শুধু ইংরেজবাজার নয়, এ বছর মানিকচকেও নির্জন আমবাগান থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ। একই সঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জেও নৃশংস ভাবে খুন হওয়া তরুণীদের দেহ উদ্ধার হয়েছে। কোথাও দেহ মিলেছে ফাঁকা চাষের জমিতে, কোথাও নদীর তীরে।
জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। আর দক্ষিণ দিনাজপুরে ১ লক্ষ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। তার জেরে হেক্টরের পর হেক্টর জমি বছরের অধিকাংশ সময় ফাঁকা পড়ে থাকে দুই জেলাতেই। কুমারগঞ্জের এক ছাত্রী জানায়, ‘‘চাষের জমির মধ্যে দিয়েই গ্রামের রাস্তা। দিনেও সেই রাস্তা কার্যত জনশূন্যই থাকে। চিৎকার করে ডাকলেও কারও সাড়া মিলবে না।’’
কেন বাগান, চাষের ফাঁকা জমিতে অপরাধ বাড়ছে জেলায় জেলায়?
তদন্তকারী এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই সব এলাকা নির্জন হলেও রাজ্য সড়ক বা গ্রামের মূল রাস্তা থেকে ৫০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটার দূরে। তাই মূল রাস্তা দিয়েই অপরাধীরা সহজেই ঢুকছে সে সব জায়গায়।’’ মালদহের আম ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘‘মরসুমের চার মাস গাছে আম থাকে। আম চুরি ঠেকাতে মালিকেরা জোগানদার রাখেন। বছরের অন্যান্য মাসগুলিতে বাগানে যাতায়াত তেমন থাকে না। তারই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা।’’ এ নিয়ে বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। (চলবে)
তথ্য সহায়তা: নীহার বিশ্বাস ও অনুপরতন মোহান্ত