প্রতীকী চিত্র
নিউ আলিপুরদুয়ারে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ও দোকানে তাণ্ডব চালিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে মারধরের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে দু’দিন। কিন্তু এখনও ওই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে শহরবাসীর। আক্রান্ত দু’টি বাড়ির বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্কও। পুলিশের অবশ্য দাবি, ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালান হচ্ছে।
রাতের আলিপুরদুয়ার শহরের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতের বেলায় শহরের নিরাপত্তা ঢিলেঢালা থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত অক্টোবরে মহাকাল মোড়ের কাছে দু’টি মোবাইল ফোনের দোকানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে বক্সা-ফিডার রোড-সহ শহরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাতে পুলিশ ভ্যান বা সিভিক ভলান্টিয়ারদের টহল দিতে দেখা যআয়। তবে তার পরেও শহরের বাকি অংশের পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি বলে অভিযোগ।
আরও অভিযোগ, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শহরের নানা এলাকার মতো নিউ আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু জায়গাতেও দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের বক্তব্য, নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনের কাছে বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা রয়েছে। তার অনেক জায়গাতেই প্রায় প্রতিদিন মদ ও জুয়ার আসর বসে। অথচ, পুলিশের তেমন নজরদারি নেই। আর যার জেরে মঙ্গলবার ও বুধবার রাতের ঘটনা বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করার সময় এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী তুষ্ট সরকারের কাছে সিগারেট ধরাতে দেশলাই চায় দুই মদ্যপ যুবক। অভিযোগ, তাতে রাজি না হওয়ায় কিছুক্ষণ বাদে ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে ওই দু’জন। যা শুনে পাশের বাড়ি থেকে সুব্রত ভদ্র বেরিয়ে এসে দুই যুবককে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। অভিযোগ, তার জেরে বুধবার মাঝরাতে প্রথমে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ও তার পর সুব্রতর বাড়িতে হামলা চালায় ওই দুই মদ্যপ যুবক এবং তাদের সঙ্গী একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, দুটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি সুব্রতর বাড়ির সামনে থাকা একটি দোকানে ভাঙচুর ও লুঠপাটও করে দুষ্কৃতীরা। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুব্রতর ভাইয়ের স্ত্রীকে লাথি-ঘুষি মারারও অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, হামলার সময় ব্যবসায়ীর বাড়ির লোকেদের লক্ষ করে দুষ্কৃতীরা গুলি ছোড়ে বলেও অভিযোগ।
শুক্রবার তুষ্ট অভিযোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে সিগারেট চেয়ে না পেয়ে বিশ্বজিত রায় ও রাকেশ রায় আমার বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। বুধবার মাঝরাতে তারা একদল দুষ্কৃতী নিয়ে আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। যাদের মধ্যে ছোটু রায় ও রুপেন রায় নামে আরও দু’জনকে চিনতে পারি। এরা প্রত্যেকেই এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার চার জনের নামেই থানায় অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু কেউ এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কে বৃহস্পতিবার সারারাত ঘুমাতে পারিনি।’’ সুব্রতও বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা এখনও ধরা না পরায় আমাদের বাড়ির সকলেও আতঙ্কে রয়েছে।’’
পুলিশের অবশ্য দাবি, রাতের অন্ধকারে মদ-জুয়ার আসর-সহ দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বন্ধে নিউ আলিপুরদুয়ার এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। বুধবারের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারেরও চেষ্টা চলছে। পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা সবাই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে।’’