বন্ধ মিলন মেলা। —ফাইল চিত্র।
কেউ টোটো-বোঝাই করে নানা খাবার, কেউ অটো ও ভ্যানরিকশায় পোশাক, কম্বল, বাসন নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। অনেকে হাতে ও মাথায় ব্যাগ ও বস্তা করে নানা জিনিস নিয়ে হেঁটেই রওনা হন। গন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার পর্যন্ত। কিন্তু গন্তব্যের তিন-চার কিলোমিটার আগেই বিএসএফ ও পুলিশ তাঁদের আটকে বাড়ির পথে ফেরাল। শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর ও বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দিনভর এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
প্রাচীন রীতি মেনে গত কয়েক দশক ধরে চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমুলডাঙি, মকরহাট ও সন্তরার প্রায় চার কিলোমিটার সীমান্তের কাঁটাতার বরাবর মিলনমেলার আয়োজন করেন দুই দেশের বাসিন্দারা। শুক্রবার সে মেলা হওয়ার কথা ছিল। অতীতে, মেলা চলাকালীন দুই দেশের মানুষ তাঁদের পরিচিত ও আত্মীয়দের একে অপরকে সীমান্তের কাঁটতারের উপর দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী ছুড়ে দিতে দেখা গিয়েছে। গত বছর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাচারের অভিযোগে বিএসএফের সঙ্গে হেমতাবাদের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের গোলমালের ঘটনা ঘটে। বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর অনুপ্রবেশ ও পাচারের আশঙ্কায় প্রাচীন ওই মেলা বাতিল করা হয়।
বিএসএফের এক কর্তা বলেন, “মেলার নামে এ দেশ থেকে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ, বিভিন্ন মাদক, সোনা, রুপো মোবাইল ফোন, দামি বাসন-সহ বিভিন্ন সামগ্রী পাচারের আশঙ্কার খবর ছিল। তেমনই বাংলাদেশ থেকে মোবাইলের সিমকার্ড, ইলিশ মাছ, শাড়ি এ পারে পাচার হতে পারে বলেও খবর ছিল। সে কারণে, এ বছর সীমান্তে মিলনমেলা বাতিল করা হয়েছে।” ডিএসপি (রায়গঞ্জ) রিপন বলের বক্তব্য, “মেলায় ভিড়ের সুযোগে সীমান্তের কাঁটাতার কেটে ও টপকে এ দেশে অনুপ্রবেশ ও এ দেশ থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারেরও আশঙ্কা ছিল। তাই মেলা বাতিলের জন্য আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয়, সে জন্য পুলিশ বিএসএফকে সব রকম সহযোগিতা করেছে।” চৈনগরের মলু দেবশর্মা, হেমতাবাদের আসলাম রফিকদের দাবি, তাঁরা বাংলাদেশের আত্মীয়দের দেওয়ার জন্য বিভিন্ন খাবার ও পোশাক নিয়ে সীমান্তে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মেলা বাতিল হওয়ায় এ বছর বাংলাদেশের আত্মীয়দের উপহার দেওয়া হল না।