Coronavirus

পরিযায়ী ফেরায় বাগানে সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কা

সরকার হোম কোয়ারান্টিনের নির্দেশ দিলেও ১-২ পর থেকে দিব্যি ঘুরছেন এলাকায়। কয়েকজন আবার নেপাল থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে ফিরছেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০৬:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি

ভিন্ রাজ্য ফেরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে এ বার উদ্বেগ বাড়ছে তরাই এলাকার চা বলয়ে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তৃতীয় লকডাউনের পর থেকেই ঘরে ফেরা শুরু হয়েছিল পরিযায়ীদের। চতুর্থ লকডাউনের পর থেকে প্রতিদিন বাগানে লোক ঢোকা শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক থেকে শুরু করে লাগোয়া নেপাল, সিকিমে যাওয়া শ্রমিকেরা আছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বাগানে সোজা চলে আসছেন বলে অভিযোগ। আবার অনেকে সরকারি ট্রেনে বা বাসে এলাকায় ফিরে আর নিয়মনীতি মানছেন না বলে অভিযোগ উঠছে।

Advertisement

সরকার হোম কোয়ারান্টিনের নির্দেশ দিলেও ১-২ পর থেকে দিব্যি ঘুরছেন এলাকায়। কয়েকজন আবার নেপাল থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে ফিরছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মাটিগাড়া চা বাগানে এমন ঘটনা ঘটেছে। বাগানে বাগানে এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাগান মালিকদের সংগঠন। বাগান কর্তৃপক্ষ আলাদা নোটিশ জারি করে পরিযায়ীদের নিয়ে স্থায়ী শ্রমিকদের সতর্ক করেছেন। ভিন্ রাজ্য ফেরতরা নিয়ম ভাঙছে দেখা মাত্রই বাগান অফিস, পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। গত সপ্তাহেই তরাই- একটি বড় চা বাগান পুলিশ-প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের মালদহ, কোচবিহার বা উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দাদের মতোই চা বলয়ের একটা অংশও ভিন্ রাজ্য বা লাগোয়া ভিন্ দেশে (নেপাল, ভুটান) কাজে চলে যায়। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিভিন্ন এলাকায় উত্তরবঙ্গের চা বাগানের বাসিন্দারা আছেন। এরা দলে দলে ফেরা শুরু হতেই বাগানে বাগানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রমিকরা ভিন্ রাজ্য ফেরতদের সরাসরি ঢুকতে দিতে চাইছেন না। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করিয়ে সুস্থ থাকার প্রমাণপত্র নিলে তবেই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে এমন দাবি উঠছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনের ওই কর্তার কথায়, আর এক অংশে কিছুই হচ্ছে না। পরিয়ায়ীদের একটি অংশ হোম কোয়ারান্টিনের নিয়ম ভেঙে অবাধ মেলামেশা করছে বলে অভিযো উঠছে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের তরাই এলাকায় ৪৭টি বড় চা বাগান রয়েছে। পাশেই পাহাড়ে রয়েছে ৮৭টি চা বাগান। সরকারি তথ্য বলছে, লক্ষাধিক চা শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেরই পরিবার বড় হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ ভিন্ রাজ্য বা জেলায় কাজের জন্য গিয়ে থাকছিল। এখন তাঁরা ফেরা শুরু করতেই আশঙ্কা বাড়ছে। নকশালবাড়ি ব্লকের অটল চা বাগান লাগোয়া এলাকায় একজন ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খড়িবাড়ির, বাগডোগরা থেকেও সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসছে। ডুয়ার্সের একাধিক বাগানেও সংক্রমণ ছডিয়েছে। ডুয়ার্সের বাগানে তরাই বাগানের কর্মী, শ্রমিকদের আত্মীয়, পরিচিতরা থাকেন। বাস, গাড়ি চালু হলে আরও অবাধ মেলামেশার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলেই প্রশাসন এবং চা মালিকদের সংগঠনগুলি উদ্বেগে রয়েছে।

টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষ জানান, আজ, সোমবার থেকে বাগানে ১০০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু হবে। লোকসানের বহর কমাতে সবাই সরকারি নিয়ম মেনে সামাজিক দূরত্ব, স্যানিটাইজ়েশন করিয়ে কাজ করাচ্ছে। এর সঙ্গে বাগানে বাগানে যাতে কোনওভাবেই সংক্রমণ না ছড়ায় তা খেয়াল রাখা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বাগানে পরিযায়ীরা ফিরছে। সতর্ক থেকে বাগানগুলিকে সরকারি নির্দেশে যা যা করণীয় তা করতেই হবে। তা না হলে সংক্রমণ কোনওভাবে এই সময়ে ছড়ালে বাগানের ভবিষ্যতের জন্য তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement