শিকলবন্দি যুবক সেলিম আখতার। নিজস্ব চিত্র।
জরাজীর্ণ মাটির বাড়ি। বাড়ির সামনে রয়েছে একটি গাছ। সেই গাছের পাশে বসে রয়েছেন ১৯ বছরের এক যুবক। তাঁর হাত-পা গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বাঁধা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ ভাবেই শিকলবন্দি রয়েছেন তিনি। অভিযোগ, পরিবারের লোকই তাঁকে এ ভাবে বন্দি করে রেখেছেন। এর জেরে তাঁর হাতে, পায়ে দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে। কখনও সেই ঘায়ে এসে বসছে মাছি বা ধুলো পড়ছে তার উপর।
এই ছবি দেখা গিয়েছে মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের একবালপুর গ্রামে। শিকলবন্দি ওই যুবকের নাম সেলিম আখতার। পরিবারের দাবি, সেলিম মানসিক ভারসাম্যহীন। কোনও কিছু করেই তাঁকে সুস্থ করে তোলা যায়নি। বড় জায়গায় চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাঁদের। তাই বাধ্য হয়েই সেলিমকে বেঁধে রাখা হয়।
সেলিমের পরিবারের লোকের অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও সাহায্য মেলেনি। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র, রেশন— এ সব কিছুই নেই সেলিমের। ২০১৭ সালের বন্যায় সর্বস্বান্ত হলেও সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ সেলিমের পরিবারের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেলিমের দাদা হারুন রশিদ এবং মা লাইলি বিবিও মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁরাও ঘর ছাড়া। তাঁদের দেখা পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন গ্রামের লোকজন। তবে সেলিমের ছোটো ভাই আসিফ সুস্থ। তাঁর বাবা জাকির হোসেন এবং ঠাকুরদা আব্দুল হক পেশায় দিনমজুর। তাঁদের রোজগারেই চলে সংসার। কিন্তু করোনা লকডাউনের জেরে সেই রোজগারেও ভাটা পড়েছে। পরিবারের এত জন সদস্যের মধ্যে রেশন কার্ড রয়েছে মাত্র একজনের নামে। সেই রেশনেই চলে সংসার। রেশন কার্ডের জন্যে বহু দরবার করেও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ। সেলিমের বাবা জাকির বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধান, এলাকার শাসক দলের নেতাদের হাতে পায়ে ধরেছি। কান্নাকাটি করেছি। কিন্তু কোনও সাহায্য মেলেনি। কেউ মুখ তুলে তাকায়নি।’’
এই ঘটনা নিয়ে তরজায় নেমেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। বিজেপি-র অভিযোগ, তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। গরীবের খোঁজ ওরা রাখে না। অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।