Samaresh Majumdar

সম্পদ অকপট স্মৃতিই

এক দিন শুনলাম, স্কুলে শুটিং হবে। সমরেশ মজুমদারের লেখা গল্পের। জনতার দৃশ্যে আমাদের হেঁটে যেতে হবে। কী উৎসাহ তা নিয়ে! দূরে বসে ছিলেন সাহিত্যিক।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৩ ০৯:২৭
Share:

গত বছর গরুমারা জঙ্গলে নজর মিনারে।

স্কুল থেকে নামটার সঙ্গে পরিচয়। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের কাছে, হাকিমপাড়ার গলিতে তাঁর বাড়ি। সমরেশ মজুমদার। স্কুল শুরুর আগে বন্ধুরা কয়েক জন যেতাম ওই বাড়িতেই। বেড়া টপকে ওই বাড়ির গাছের পেয়ারা, কুল চুপি সারে পাড়তে। ক্লাসে বসে খাব বলে। সে সব পকেট ভরে বাড়ির সামনে দিয়ে যখন ফিরতাম, বারান্দায় বসে থাকা বাড়ির সদস্যেরা অনেক সময় পেড়ে রাখা পেয়ারা ভাগ করে দিয়েছেন, এমনও হয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসা করতাম ‘‘সমরেশ মজুমদার আছেন?’’ উত্তর পেতাম, ‘‘এখন সব সময় থাকেন না।’’

Advertisement

এক দিন শুনলাম, স্কুলে শুটিং হবে। সমরেশ মজুমদারের লেখা গল্পের। জনতার দৃশ্যে আমাদের হেঁটে যেতে হবে। কী উৎসাহ তা নিয়ে! দূরে বসে ছিলেন সাহিত্যিক। শুটিংয়ের পরে আমাদের এক বন্ধুর পিঠও চাপড়ে দিলেন।

আবার তাঁর সঙ্গে দেখা যখন সহকারী হিসাবে চলচ্চিত্র পরিচালক নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করছি। এক দিন সকালে কলকাতার টালা পার্কে নব্যেন্দুদার বাড়িতে হাজির সমরেশ মজুমদার। দু’জনেই খুব বন্ধু। অনেকক্ষণ ধরে ‘কলিং বেল’ বাজাচ্ছিলেন। কোনও কারণে তা শোনা না-যাওয়ায় ডাকাডাকিও করছিলেন। পরে, আমি কী মনে করে দরজা খুলে দেখি, বাইরে দাঁড়িয়ে পরিচিত সেই মুখ। ভিতরে এলেন। নব্যেন্দুদাও পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘তোমাদের জলপাইগুড়ির ছেলে।’’ সমরেশদা স্বভাবসুলভ রাশভারি গলায় বললেন, ‘‘জলপাইগুড়ির ছেলেরা একটু বোকা হয়।’’ আমি কী বলি! চুপ করে রইলাম।

Advertisement

ফুলবাড়িতে জলপাইগুড়ির দূরদর্শন কেন্দ্রের স্টেশন ডিরেক্টর তখন জগন্নাথ বসু। তিনি প্রস্তাব দিলেন স্থানীয় দূরদর্শনের জন্য উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ভূমিপুত্রদের নিয়ে তথ্যচিত্র করতে। সে সূত্রেই ২০০৩ সালে এক সকালে সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম কলকাতায় শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে। বিষয়টি জানাতেই সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। বললেন, ‘‘এক দিনে হবে না। মাঝেমধ্যে সকালে এসে কথা বোলো।’’ সেই মতো যেতাম। চেয়ারে বসে গয়েরকাটায় নিজের ছেলেবেলার কথা থেকে নানা বিষয়ে বলে চলতেন। রেকর্ড করতাম। চিত্রনাট্য তৈরি হল। শেষ পর্যন্ত সে তথ্যচিত্র তৈরি হয়নি। তবে অকপট সমরেশ মজুমদারের সে স্মৃতি, আমার কাছে সম্পদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement