এনআরসি বিরোধী মিছিলে। দার্জিলিঙে। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ে গেলেই হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এর আগে কখনও পদযাত্রা করেছেন কি? মনে করতে পারলেন না ম্যাল চৌরাস্তার একধারে দোকান করে বসে থাকা মণি তামাং।
সকাল তখন আটটা। মোবাইল ফোনের অ্যাপ দেখাচ্ছে, তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ম্যালে দোকানপাটের ঝাঁপ খোলেনি ভাল করে। তার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল তোড়জোড়। শেষে দুপুরে শুরু হল পদযাত্রা, সেই ভানু ভবনের সামনে থেকে, যেখানে আড়াই বছর আগে বিমল গুরুং ও তাঁর সঙ্গীরা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এ দিন সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, পাহাড় বদলে গিয়েছে। দূরে মণিও তখন এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে। জানালেন, দোকান রেখে যাবেন না। তবে মিছিলে সমর্থন আছে তাঁরও।
কেন? তার জবাবই যেন দিয়ে গেল পরের চার কিলোমিটার হাঁটা। মিছিলে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন কার্শিয়াঙের বাসিন্দা মারিয়া রাই, লক্ষ্মী মংরাতিরা। তাতে লেখা দার্জিলিং, তরাই, ডুয়ার্সকে সিএএ থেকে ছাড় দেওয়া হোক। কারওটাতে লেখা ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’। এমন প্ল্যাকার্ড দেখা গিয়েছে মোটর স্ট্যান্ডের সভাস্থলেও।
ভানুভবন থেকে শুরু হয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগোতে থাকে মিছিল রবার্টসন রোড, গাঁধী রোড ধরে। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায় মিছিলে শামিল বাজনাদারদের কাঁসর নিয়ে বাজাচ্ছেন। তা দেখতে এবং মোবাইলে ছবি তুলতে রাস্তার দু’ধারে ভিড় জমে যায়। অনেকে সেই ভিড় থেকে ঢুকে পড়তে থাকেন মিছিলে। কাকঝোরার কাছে মিছিল পৌঁছতেই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দেখা যায় একতারা। ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে কাকঝোরা মোড়ে তখন ভিড় উপচে পড়ছে। বেলা আড়াইটে নাগাদ যখন মোটর স্ট্যান্ডের সভাস্থলে মিছিল পৌঁছয়, সেখানে তিন ধারনের জায়গা নেই। মঞ্চে উপস্থিত দার্জিলিঙের বিশপ স্টিফেন লেপচাও। তিনিও মানুষদের অধিকার নাগরিকত্বের কথা তুলে ধরেন।
মমতার বক্তৃতার সময়েও হাজির জনতা চেঁচিয়ে, হাততালি দিয়ে নিজেদের সমর্থন জানাতে থাকে। ‘‘জানানোই স্বাভাবিক,’’ বলছিলেন শিরিং ভুটিয়া, ‘‘এনআরসি-র ভয় তো আমাদের সকলেরই আছে!’’