অমরনাথের দুর্গম পথে যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
এ বছর অমরনাথ যাত্রা গত ৩০ জুন থেকে শুরু হয়েছে। আমরা আট জন মালদহ থেকে অমরনাথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি ৪ জুলাই। শ্রীনগর হয়ে পহেলগাঁও পৌঁছই ৫ জুলাই দুপুরে। পহেলগাঁও টেন্টে আমরা ছিলাম। এর পরেই শুরু হয় আবহাওয়ার বিশৃঙ্খলা।
সে দিন যাত্রা বন্ধ হয় প্রচণ্ড বৃষ্টিতে। পরের দিন সকালেও প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য যাত্রা বিলম্বিত হয়। সে দিন বেলা বাড়লে ফের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের আট জনের দলটি আরও প্রায় দশ হাজার যাত্রীর সঙ্গে চন্দনবাড়ি বেস ক্যাম্পে সিকিউরিটি চেকিংয়ের পর যাত্রা শুরু করে।
পিসু টপের খারাপ খাড়া বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় আমি আর উঠতে পারছিলাম না। ভীষণ ভীষণ কঠিন। তখন ঘোড়া নিই আমরা। রাত্রি প্রায় ৮টায় শেষনাগ বেস ক্যাম্পে পৌঁছই। তিন পাশে বরফ ঢাকা পাহাড়ের মধ্যে বেস ক্যাম্প। এক স্বর্গীয় অনুভূতি। রাতে ক্যাম্পে আমি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের সহযাত্রী ডাক্তার বিশ্বজিৎ ঘোষ আমাকে সুস্থ করে তোলেন। এ ভাবেই পরের দিন আমরা শেষনাগ থেকে পঞ্চতরণীর পথে যাত্রা শুরু করি। সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিলাম।
অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য চারপাশে। চড়াই উৎরাই পথ, তারই মাঝে ঘোড়া, পালকি আর পায়ে হাঁটতে থাকা যাত্রীরা চলেছেন অমরনাথের পথে। ভীষণ কষ্ট, সঙ্গে বৃষ্টি আর পাথুরে কর্দমাক্ত রাস্তা। মনে হচ্ছিল যেন পথ আর শেষ হবে না। পঞ্চতরণী থেকে ভীষণ খারাপ আর খাড়া রাস্তা। প্রায় চোদ্দ হাজার আটশো ফুট উঁচু গণেশ টপ পার হয়ে সঙ্গম টপের পর বালতাল রুট আর পহেলগাঁও রুট মিলে সরু রাস্তায় ভিড় অনেক বাড়িয়ে দিল এবার।
৭ জুলাই সন্ধ্যায় আমরা পৌঁছতে পারি অমরনাথের গুহাতে। দর্শন শেষে রাত ৯টায় একটি টেন্ট পেলাম। বরফে ঢাকা নদীর উপরে টেন্ট। আমাদের পরিচিত এক ভারতীয় সেনা বলেছিলেন রাতে না থাকাই ভাল, এখানে আবহাওয়া যে কোনও সময় বদলে যেতে পারে। বুঝিনি আবহাওয়ার বদলে যাওয়া রূপ কী হতে পারে।
পরদিন ভোর ৫টায় অমরনাথ থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই ফিরতে শুরু করি। বালতাল রুট ভীষণ খারাপ আর খাড়া। কিন্তু দাঁড়ানোর উপায় নেই। এত সরু রাস্তা, দুর্যোগ মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। দুপুর ১২টায় বালতাল বেস ক্যাম্পে নেমে আসি। সন্ধ্যায় বেসক্যাম্পে শুনি মেঘ ভাঙা বৃষ্টির খবর। কত যে প্রাণ যেতে পারে তার অনুমান অসম্ভব। ওখানে লড়াই ভীষণ ভীষণ কঠিন। আমরা ছিলাম, আমরা জানি। ঈশ্বরের কৃপায় বিপর্যয়ের ঠিক আগে নেমে আসি।
লেখক অমরনাথ যাত্রী, স্কুল শিক্ষক