উত্তম দাম।
এক জন মারা গিয়েছেন। আর এক জন লড়াই করছেন মৃত্যুর সঙ্গে। জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ব্রহ্মত্তর পাড়ার বাসিন্দা দুই তুতো ভাইয়ের অবস্থা দেখে পরিবার এবং স্থানীয় লোকজনের দাবি, দু’জনই নিশ্চয়ই স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে এই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। তাদের বক্তব্য, রোগীদের রক্ত পরীক্ষা না করে কিছু বলা যাবে না। তবে গত বছর মালবাজার মহকুমায় দু’জনের রক্তে এই জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা।
ব্রহ্মত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ ওরফে উত্তম দাম (৪৪)। বাড়ির লোকেরা জানাচ্ছেন, ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে তিনি এবং তাঁর খুড়তুতো ভাই লক্ষ্মী দামের পায়ে ছোট ফোড়ার মতো গুটি দেখা যায়। প্রথমে ফোড়া-ই ভেবেছিলেন আত্মীয়েরা। কিন্তু ক্রমে দু’জনের ব্যথা বাড়তে থাকে। শেষে তীব্র ব্যথায় দু’জনে ছটফট করতে থাকেন বলে জানিয়েছেন বাড়ির লোকেরা। তাঁদের কথায়, সঙ্গে জ্বর ও বমি শুরু হয়।
বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, এর পরে শুরু হয় চিকিৎসা বিভ্রাট। প্রদীপ ও লক্ষ্মীর আত্মীয় বীণা দাস বলেন, ‘‘আমরা পরদিন, ১৭ ডিসেম্বর দু’জনকেই জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকেরা ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু দু’জনেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেষে ১৯ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে দু’জনকেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওখানকার চিকিৎসকেরা জানান, দ্রুত ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করতে দু’জনকেই। কিন্তু ওখানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে বেড ফাঁকা না থাকায় শিলিগুড়ির এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার রাতে প্রদীপের মৃত্যু হয়।’’
পরিবারের অভিযোগ, শিলিগুড়ির বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম থেকে এই দুই ভাইকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে ভক্তিনগর এলাকার এক নার্সিংহোমে তাঁদের ভর্তি করানো হয়। এই নার্সিংহোমের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘দুজনের সংক্রমণই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের কাছে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল ওঁদের।’’ তবে স্ক্রাব টাইফাস থেকেই সংক্রমণ কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি তিনি। শুধু বলেন, ‘‘স্ক্রাব টাইফাস থেকেই সংক্রমণ কিনা, তা বলা সম্ভব নয়।’’
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে জলপাইগুড়িতেও। গত বছর মালবাজারে দু’জনের রক্তে এই জীবাণু মিলেছিল। এ বারে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে স্ক্রাব টাইফাসের হানাদারির সংবাদ মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’