‘বাড়িতে না আসে লখনউ পুলিশ’

বাঁ পা জখম, উত্তরপ্রদেশ থেকে ফিরতে পারলেও আতঙ্কে চান্দু

উত্তরপ্রদেশ থেকে ফিরে আসা হরিশ্চন্দ্রপুরের জনমদোলের শ্রমিক ও তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে রবিবার দেখা করতে গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের শিশু, নারী ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ মার্জিনা খাতুন। তাঁকে সামনে পেয়ে ১৯ ডিসেম্বরের কথা জানালেন চান্দু।

Advertisement

বাপি মজুমদার

হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৬
Share:

ফেরা: জনমদোলে মায়ের সঙ্গে চান্দু। নিজস্ব চিত্র

সে দিনের কথা তুললেই আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট তাঁর চোখমুখে। রডের আঘাতে ভাঙা পায়ের যন্ত্রণাও যেন তাতে আরও টাটকা চান্দুর।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশ থেকে ফিরে আসা হরিশ্চন্দ্রপুরের জনমদোলের শ্রমিক ও তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে রবিবার দেখা করতে গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের শিশু, নারী ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ মার্জিনা খাতুন। তাঁকে সামনে পেয়ে ১৯ ডিসেম্বরের কথা জানালেন চান্দু। কী হয়েছিল সে দিন?

লখনউয়ের হোটেলে কাজ করতে যাওয়া ওই যুবক জানালেন, রাস্তায় গোলমাল দেখে ভাড়াবাড়িতে চলে যান তিনি। সঙ্গে এ রাজ্য থেকে সেখানে যাওয়া আরও কয়েক জন। কিছুক্ষণ পরে সেখানে যায় পুলিশ। দরজা খুলতেই তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চান্দুর অভিযোগ, পুলিশের হাতে লোহার রড ছিল। ঘরের বাইরে সকলকে বের করেন নিরাপত্তাকর্মীরা। রডের আঘাতে বাঁ পা ভেঙে যায় তাঁর। যন্ত্রণায় বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। পরে কয়েক জন তাঁকে ঘরে নিয়ে যায়। পরের দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করান তিনি। তার পরে ভাঙা পা নিয়েই বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরেন চান্দু। তিনি বলেন, ‘‘পা ভেঙে বেহুঁশ না হয়ে না পড়লে হয়তো আমাকেও পুলিশ তুলে নিয়ে যেত। ঠাঁই হত জেলে।’’

Advertisement

চান্দু বাঁচলেও ওই এলাকার ছয় শ্রমিক গ্রেফতার হয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে। কিন্তু ছেলে বাড়ি ফেরায় স্বস্তিতে তাঁর পরিবার। তবে বাড়ি ফিরলেও দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে চান্দুকে। এ দিন মার্জিনাকে সামনে পেয়ে সেই আতঙ্কের কথাই শোনান তিনি। উত্তরপ্রদেশে ধৃত ডাঙ্গিলা এলাকার চার শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে শনিবার দেখা করেছিলেন মার্জিনা। এ দিন তিনি জনমদোলে যান। ধৃত দুই পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে উত্তরপ্রদেশ থেকে ফিরে আসা চান্দুর বাড়িতেও যান। ওই তৃণমূল নেত্রীর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সে রাজ্যের পুলিশের হাতে আটক আসলামের বাবা আব্দুল কালাম ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করে সাহায্যের আবেদন জানান।

মার্জিনা বলেন, ‘‘যাঁরা বাড়ি ফিরেছেন, তাঁদের কাছ থেকে যা শুনলাম তাতে ধৃতেরা কতটা দোষী তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আসলে এ রাজ্যের শ্রমিকদের ওরা জঙ্গি তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাঁরা রোজগারের আশায় সেখানে গিয়েছিলেন। অনেকেই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে।’’

চান্দুও পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। দিনমজুর বাবা ফারুক আলি এখন তেমন কাজ করতে পারেন না। বাড়িতে মা সহরুনা বিবি ছাড়াও চার ভাইবোন রয়েছে। অবিবাহিত বছর কুড়ির চান্দুই তাদের মধ্যে বড়। পাঁচ বছর ধরে লখনউয়ের হোটেলে কাজ করা চান্দুর পাঠানো টাকাতেই সংসার চলে।

চান্দু এ দিন বলেন, ‘‘আমরা ভয়ে ঘরের মধ্যেই ছিলাম। কিন্তু পুলিশ এ রাজ্যের বাসিন্দা কারা তা খুঁজে খুঁজে মারধর করছিল। পুলিশ যে ভাবে রড দিয়ে মারছিল তাতে ওদের গুণ্ডা বলে মনে হচ্ছিল। ভয়ে পালানোর সময় ছ’জনকে ধরে ফেলে।’’

সহরুনা বলেন, ‘‘এখনও ছেলের মন থেকে আতঙ্ক যায়নি। সব সময় ভাবছে লখনউ থেকে পুলিশ এখানে এসে ওকে ধরে নিয়ে যাবে না তো। ও বাড়ি ফেরায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছি। ধরা পড়া ৬ জনও বাড়ি ফিরে আসুক, এটাই এখন চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement