মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্থায়ী চাকরির আর্জিও জানিয়েছেন যুবক। — নিজস্ব চিত্র।
মাল নদীতে হড়পা বানে মৃত্যু হয়েছিল এক তরুণীর। ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাঁর ভাইকে চাকরি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই চাকরি এ বার প্রত্যাখান করলেন ওই যুবক। অভিযোগ, স্থায়ী চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোমগার্ডের কাজ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্থায়ী চাকরির আর্জিও জানিয়েছেন যুবক। এ নিয়ে বিজেপি এবং সিপিএম কটাক্ষ, ভোটের রাজনীতি করছে তৃণমূল। শাসকদলের পাল্টা প্রশ্ন, গুজরাতে সেতু ভাঙার পর কত জন চাকরি পেয়েছে?
দশমীর রাতে মাল নদীতে দুর্ঘটনার পর গত ১৭ অক্টোবর মালবাজারে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। প্রত্যেক পরিবারের এক জনকে চাকরির প্রস্তাবও দেন তিনি। পরের দিন, ১৮ অক্টোবর মাল আদর্শ বিদ্যাভবনে প্রশাসনিক বৈঠকের সময় তাঁদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন মমতা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন চাকরিতে যোগও দিয়েছেন। যদিও সুদীপ পোদ্দার নামে এক যুবক ওই চাকরি ফিরিয়ে দিলেন।
দশমীর রাতে হড়পা বানে মারা যান সুস্মিতা পোদ্দার। তাঁরই ভাই সুদীপ চাকরি ফিরিয়ে অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের স্থায়ী সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর দেখি চাকরিটা স্থায়ী নয়। তাই এই চাকরিতে যোগ দেব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী স্থায়ী চাকরির আর্জিও জানিয়েছেন সুদীপ। তাঁর এক দাদা সঞ্জয় পোদ্দার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কিছু দিন পর ভাইয়ের হাতে আসে এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট। ১৮ অক্টোবর দেওয়া হয় সেই শংসাপত্র। কী চাকরি, সেটা প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না। এসডিপিওর কাছে গেলেও সদুত্তর পাইনি। পরে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে জানতে পারি, এটা অস্থায়ী হোমগার্ডের চাকরি। এই চাকরি করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভাই।’’
বিষয়টি জানতে পেরে কটাক্ষ করে সিপিএম। দলের মালবাজার এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘‘এই চাকরির নিয়োগপত্র একটা ভাঁওতাবাজি। মুখে এক রকম কথা বলা হয়েছে, কাজে অন্য রকম। চুক্তিভিত্তিক চাকরি দিয়ে মৃতের আত্মীয়দের অপমান করা হয়েছে। ভোটের রাজনীতি করছে তৃণমূল।’’
বিজেপিও বাদ যায়নি। মালবাজার টাউনের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি নবীন সাহা বলেন, ‘‘সরকারের দেওয়া এই চাকরিতে নো ওয়ার্ক নো পে। অস্থায়ী চাকরি দিয়ে আদতে মানসিক চাপ দেওয়া হল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একটা আইওয়াশ।’’
তৃণমূল যদিও অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দিয়েছে অন্য ভাবে। মালবাজার টাউন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অমিত দে বলেন, ‘‘চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়টা আমার জানা নেই।’’ তার পরেই তোপ দেগে বলেন, ‘‘বিজেপি তো কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি দিতে পারত। এটা সরকারি ব্যাপার, সরকারই জানবে। গুজরাতের সেতু ভাঙার ঘটনায় কত জনকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হয়েছে?’’
৫ অক্টোবর, দশমীর রাতে নিরঞ্জনের সময় মাল নদীতে হড়পা বানে মৃত্যু হয় আট জনের। ঘটনায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারও মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।