মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে এত দিনের চলে আসা কিছু প্রথা এ বারে ভেঙে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে এক দিকে হাতবদল হল এমন কিছু দফতরের, যেগুলি প্রচলিতভাবে উত্তরবঙ্গের লোকেরা পেয়ে থাকতেন। অন্য দিকে আবার উত্তরবঙ্গের মন্ত্রীদের এমন দফতরে আনা হল, যার কাজের ক্ষেত্র ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাজ্যে। সে কথা স্বীকার করেছেন উত্তরের মন্ত্রী থেকে প্রথম সারির নেতারাও।
গত কয়েক দিন ধরে যে দফতরটি নিয়ে সব থেকে বেশি চর্চা চলেছে, সকলকে চমকে দিয়ে সেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরটি নিজের হাতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ, এই দফতরের ভালমন্দ সব দায়িত্ব এ বারে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর। এই দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনকে। এখন বকলমে উত্তরবঙ্গের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ তিনিই দেখবেন। তৃণমূল আমলে এই দফতরটির দায়িত্বে প্রথমে ছিলেন গৌতম দেব, পরে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তবে দফতরের কাজ নিয়ে সম্প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক মাস আগে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির বেশ কিছু এলাকার কাজ গৌতমকে দেখতেও বলেন তিনি। এ বারে নিজের হাতেই নিলেন দফতরের রাশ।
প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবও মনে করেন, এ বারের মন্ত্রিসভা ছক ভেঙেই তৈরি। তাঁর মতে, মন্ত্রিসভার কলকাতাকেন্দ্রিকতা কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কে কোন কাজ কতটা করতে পারে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে কেউ বেশি ভাল জানে না।’’ তা-ও কিছু দফতরের দায়িত্ব নতুন হাতে দেওয়ার মধ্যে কি একটু ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে না? কৃষি বিপণন মন্ত্রী হয়েছেন বিপ্লব মিত্র। তিনি বা সাবিনা ইয়াসমিন কেউই তেমনটা মনে করছেন না। বিপ্লবের কথায়, ‘‘দফতরের কাজ সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা না থাকলেও শিখে নেব। আজ থেকেই কাজ শুরু করে দিতে চাইছি। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী আছেন, তিনিই শিখিয়ে নিচ্ছেন আমাদের।’’ একই কথা বলেন সাবিনাও।
এ বারের মন্ত্রিসভাকে ব্যতিক্রমী বলছেন শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীও। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন বন, পর্যটন, তফসিলি জাতি-জনজাতি উন্নয়ন দফতরগুলি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পেতেন উত্তরবঙ্গের মন্ত্রীরা। এ বারে সেই ছবিটা বদলে গিয়েছে।’’ নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠলেই বিশেষ করে প্রাথমিকের পড়াশোনায় জোর বাড়াতে হবে। উত্তরবঙ্গে সব থেকে ধান উৎপাদন করে যে জেলা, সেই দক্ষিণ দিনাজপুরের বিপ্লব মিত্র যেমন নিজের দফতর সম্পর্কে জানান, কৃষি বিপণনের ক্ষেত্র গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে আছে। সেখানে কোচবিহার, মালদহ বা উত্তরের জেলার সঙ্গে কোনও ভেদ নেই বর্ধমান, মেদিনীপুর বা দক্ষিণের কোনও জেলার। কাজ সর্বত্রই সমানভাবে করা হবে। একই ভাবে সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে গোলাম রব্বানিকেও ভাবতে হবে কোচবিহার থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সব জায়গা নিয়েই।
উত্তরবঙ্গের মন্ত্রীদের সকলেই কোনও না কোনও সময়ে অন্য দলে ছিলেন। কিছু দিন আগে দল বদল করা সাবিনা যেমন মনে করেন, তৃণমূলে আসার সিদ্ধান্তটা সব দিক থেকে যুক্তিযুক্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমি মানুষের মাঝে আছি। তাই দল বদল করলেও মানুষ ফেরায়নি।’’ লোকসভা ভোটের পরে দলের সঙ্গে মনোমালিন্যে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন বিপ্লব। এখন সেটা তাঁর কাছে ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’।
বর্ষীয়ান নেতা করিম চৌধুরী এ বারে মন্ত্রিত্ব পাননি। এ দিন অবশ্য তাঁকে অতিরিক্ত ডেপুটি স্পিকার করা যায় কিনা, তার আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে দল সূত্রে খবর, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ডাকে বুধবার কলকাতা যাচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। শিলিগুড়ির পুর-প্রশাসক ছাড়া তাঁকে দল আর কী কাজে লাগাবে, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।