মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
টানা বৃষ্টি চলছে দিন কয়েক ধরে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদীর জল। গত তিন দিন ধরে কোচবিহার ভারী বৃষ্টিতে নদী উপচে একাধিক জায়গায় কার্যত বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ‘নবান্ন’-এর বৈঠক থেকে কোচবিহার জেলার প্রশাসন-পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তাদের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আলিপুরদুয়ারেও এ দিন প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন মমতা।
এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ এবং মাথাভাঙা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২টি 'রিলিফ সেন্টার' ও ছ’টি 'কিচেন' চলছে। 'রিলিফ সেন্টারে’ প্রায় পাঁচ থেকে ছ'শ লোক রয়েছে। কোচবিহার হেরিটেজ টাউন। বর্ষার সময়ে আমি এক বার সেখানে প্রশাসনিক রিভিউ মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, এক হাঁটু জল বইছে। হেরিটেজ টাউন হিসেবে কোচবিহারকে গড়ে তোলা হচ্ছে। তাই সেখানে রাস্তা উঁচু করতে হবে।’’ আলিপুরদুয়ার নিয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। যে কোনও দুর্ঘটনার খবর যাতে দ্রুত প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়, সে জন্য একাধিক ফোন নম্বর চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এ দিন একাধিক বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে মতোই আমরা কাজ করব।’’ মহকুমাশাসক (তুফানগঞ্জ) বাপ্পা গোস্বামীও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কাজ হচ্ছে। তুফানগঞ্জ মহকুমায় ছ’টি ত্রাণ শিবির এবং গবাদি পশু রাখার জন্য দু’টি শিবির খোলা হয়েছে। শিবিরগুলিতে দু’বেলা রান্না করে খাবার দেওয়া হচ্ছে। ‘বেবি ফুড’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নদীতে জল বাড়তেই কোচবিহারে ভাঙন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোলং-সহ দিনহাটার শিঙিমারি ও ধরলা নদীর ভাঙনে মাথাভাঙা ২ ব্লকের রাঙামাটি, মণ্ডলপাড়া, দিনহাটার বড় শোলমারির মদনাকুড়া, গিতালদহের জারিধরলা, দরিবস এলাকার মানুষ বিপদে পড়েছেন। গিতালদহে ধরলা নদীর ভাঙনে ১৯টি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও প্রায় ২৫টি। দিনহাটা ১ ব্লকের বিডিও গঙ্গা ছেত্রী জানান, ভাঙন রোধে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।
‘নবান্ন’ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনও। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন ছিল। আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন কালজানি নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় কিছু পরিবার বাঁধের উপরে উঠে এসেছিল। কুমারগ্রাম ও কালচিনিতে খুলতে হয়েছিল ত্রাণ শিবির। তবে সেখানে বর্তমানে কেউ নেই। এখনও আলিপুরদুয়ার ও ফালাকাটার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে আলিপুরদুয়ারের পুরপ্রধান প্রসেনজিৎ কর জানান, শহরের কোথাও এই মুহূর্তে জল জমে নেই। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মাথায় রাখা হবে।