দলনেত্রী: শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
হরিশ্চন্দ্রপুরের ছয় যুবক হোটেলে কাজ করতেই উত্তরপ্রদেশ গিয়েছিলেন। শিলিগুড়িতে প্রকাশ্যে সে কথাই বলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে দেখেছেন, ২৩ জনকে গুলি করে মেরেছে। আমাদের রাজ্যের ছ’টি ছেলে ওখানে হোটেলে কাজ করতে গিয়েছিল। তাদের সব টেররিস্ট বলে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কী অবস্থা। ওদের বাড়ির লোক আমাদের জানিয়েছেন, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’’
এনআরসি ও নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার শিলিগুড়িতে কর্মসূচি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে ওই আইনের প্রতিবাদে মিছিল করা হয়। মিছিল শেষে বাঘাযতীন পার্কে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে বিঁধে আটকদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে রাজ্য সরকার যে তাঁদের পাশে রয়েছে সেই বার্তা আটক শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছিল। আটক শ্রমিকদের বাড়ি গিয়ে রাজ্য সরকারের সেই বার্তা জানিয়ে এসেছিলেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান তজমুল হোসেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মুখ খোলায় আটক ছেলেদের ফেরা নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন আত্মীয়-পরিজনেরা।
লখনউয়ের হজরতগঞ্জ এলাকার তুলসীবাজারে একটি হোটেলে কাজ করতেন হরিশ্চন্দ্রপুরের আটক ছয় শ্রমিক। তাঁদের চার জন ডাঙ্গিলা ও দু’জন জনমদোল এলাকার বাসিন্দা। গত ১৯ ডিসেম্বর সেখানে গন্ডগোলের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। ধৃতরা একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, এমনও শুনেছিলেন পরিবারের লোকজন। ফলে ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। কীভাবে আটক ছেলেদের ছাড়াবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই পরিজনদের। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় অনেকটাই স্বস্তিতে আটকদের আত্মীয় পরিজনেরা।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন ডাঙ্গিলার দুই ভাই খাইরুল হক ও সালেদুল হক। তাদের বাবা মহম্মদ হোদা বলেন, ‘‘ছেলেরা অভাবের তাড়নায় সেখানে কাজে গিয়েছিল। ওরা যে নির্দোষ তা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। যে সব সংগঠনের সঙ্গে ওরা জড়িত বলে বলা হচ্ছিল তার নামই ওরা শোনেনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন যা বলেছেন তাতেও ওরা যে দোষী নয় সেটাই পরোক্ষে উঠে এসেছে।’’ ওই ঘটনার পরে অন্যদেরও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে এই ভয়ে অনেকেই বাড়ি চলে আসেন।
জনমদোলের বাসিন্দা আসলামের বাবা আব্দুল কালাম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীই এখন ভরসা। আশা করি ছেলেরা যে নির্দেষ, তা প্রমাণ হবে।’’
খাইরুলরা যে হোটেলে কাজ করতেন সেই হোটেলের মালিকও জানিয়েছিলেন, ওই যুবকেরা গন্ডগোলে জড়িত নন। ওই হোটেলের মালিক উত্তম কাশ্যপ এ দিনও লখনউ থেকে ফোনে বলেন, ‘‘ওঁরা গন্ডগোলের ধারেকাছেও ছিলেন না। গন্ডগোল হচ্ছে দেখে বাইরে বের হয়েছিলেন। তাই সামনে পেয়ে ওঁদের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।’’