জনমুখী: প্রাপকের হাতে সরকারি প্রকল্পের নথি তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
রাজবংশীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে প্রকাশ্য সভায় ওই সম্প্রদায়ের প্রতি মমতার বার্তা, তাঁদের ‘দিদি’ পাশেই আছেন।
এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি এই আশ্বাস দিলেন, সংখ্যার নিরিখে কোচবিহারের পর যেখানে রাজবংশীদের বসবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এখানেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত উপনির্বাচনে জিতেছে শাসক দল। সেই ‘অক্সিজেনে’ই ফের নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তৃণমূল। এহেন কালিয়াগঞ্জে দাঁড়িয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “চিন্তা করবেন না রাজবংশী ভাইবোনেরা। আপনাদের পাশে আপনাদের এই দিদিটাকে পাবেন। আর কোনও চিন্তা করার কারণ নেই। আপনার পরিবার মানে আমার পরিবার। এটা মাথায় রাখবেন।”
সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী অসমের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, “আজকে দেখছেন অসমে কী চলছে? নির্বাচনের সময়ে এসে বলল, রাজবংশী ভাইবোনেরা, তোমরা থাকবে বাঙালিদের তাড়িয়ে দেব। এইসব বলে ভোট নিয়ে পালিয়ে গেল। আর অসমে দেখেছেন রাজবংশী খুন করতেও পিছপা হয়নি। বাঙালিকেও খুন করতে পিছপা হয়নি। রাজবংশীর নামও কাটা গিয়েছে। হিন্দু, মুসলমান সবার নাম কাটা গিয়েছে।” এরপর মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “রাজবংশী ভাইবোনেরা ও তফসিলি যারা আছেন, আপনারাও পেনশন পাবেন ৬০ বছরে। যদি অন্য কোথাও না পান। আপনাদের জন্য আমি রাজবংশী আকাদেমি করে দিয়েছি, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছি। আমি আপনাদের ভাষায় বই তৈরি করছি। রাজবংশী ভাষাকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি।”
লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে ভড়াডুবি হয়েছিল তৃণমূলের। সেই জায়গা দখল করেছিল বিজেপি। এই ফলের পরে কার্যত মুষড়ে পড়েছিলেন রাজ্যের শাসক দলের কর্মীরা। তার পরেই উপনির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় কাজ শুরু করে তৃণমূল। কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ৫৪ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ওই এলাকার ৬০ শতাংশ মানুষের উপরের বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের। এই অবস্থায় জয় যে কথার কথা নয়, তা বুঝতে পেরেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত সেই কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। যা নতুন করে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর কাজে সহায়ক হয়েছে। তাই সেই মাঠে দাঁড়িয়ে যে দরাজ-হস্ত হবেন মুখ্যমন্ত্রী সে ধারণা ছিল অনেকেরই। তিনিও নিরাশ করেননি।
বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজবংশীদের উপরে টানা অত্যাচার চালিয়েছে তৃণমূল। সেই জবাব দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। শুধু ভয় দেখিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করে আর লাভ হবে না।”