মঞ্চে: কন্যাশ্রীদের জন্য তৈরি গ্রাফিক নভেল হাতে বুনিয়াদপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী।ছবি: অমিত মোহান্ত
বুনিয়াদপুরে কর্মিসভার মঞ্চে তখনও ওঠেননি তৃণমূলনেত্রী। মঞ্চের পাশে তাঁর জন্য তৈরি ‘বিশেষ ঘরের’ সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আদিবাসী, রাজবংশী সম্প্রদায়ের শ’দুয়েক শিল্পী। তাঁদেরই এক জনের গলায় ঝুলছিল জীর্ণ হারমোনিয়াম। ঘর থেকে তা দেখে তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে ভিতরে ডেকে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকটি ‘রিড’ চেপে একটি সুরও তোলেন তিনি। তার পরেই উঠে যান মঞ্চে। পরে বক্তব্যের ফাঁকে নিজেই সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেখলাম এক জন ভাঙা হারমোনিয়াম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অর্ধেক রিড নেই। আমি সেটাই একটু বাজালাম। আমি শিল্পকে ভালবাসি।’’
বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহের দলীয় সভায় এমনই সুরে দলনেত্রীর সঙ্গে মিলল কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। দলের নেতাদের দাবি, তৃণমূলনেত্রীর জেলা সফরের সাম্প্রতিক সব সভাকে কার্যত ছাপিয়ে গিয়েছে এ দিনের দুই জেলার দুই জনসভা। সভা শেষে তৃণমূলের দুই জেলার নেতৃত্বই ‘দিদি’র কাছ থেকে ‘ফুল মার্কস’ পেয়ে উচ্ছ্বসিত।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে এ দিনের প্রথম সভা ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুরুতে মাঠ না ভরায় জেলা নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। মঞ্চের সামনের দু’টি জোন দুপুর পর্যন্ত কার্যত ফাঁকা ছিল। দলের জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে উঠে মাইক হাতে নিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীদের এগিয়ে আসতে বলেন। সেই ঘোষণা শুনেই হুড়মুড়িয়ে কর্মীরা সে সব জায়গায় বসে পড়েন। এরই মধ্যে দলনেত্রী হেলিকপ্টার থেকে নেমে মঞ্চের সামনে পৌঁছতেই সভাস্থল কানায় কানায় ভরে ওঠে। এক সময় মমতাকে নির্দেশ দিতে হয়, সভাস্থল ঘিরে রাখা পর্দা খুলে দিয়ে বাইরের কর্মীদের মঞ্চ দেখার সুযোগ করে দিতে।
দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে এটাই ছিল অর্পিতা ঘোষের নেতৃত্বে আয়োজিত মমতার প্রথম কর্মিসভা। দলের অন্দরমহলের খবর, তাই মাঠ ভরানো নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তিনি। কিন্তু সভাশেষে ভিড় দেখে স্বস্তি পেলেন তিনি।
অর্পিতা বলেন, ‘‘সভা শুরুর কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। আবহাওয়া খারাপ থাকায় এক ঘণ্টা আগেই চলে আসেন দিদি। তাই প্রথমে কর্মীরা আসতে একটু দেরি করেছিল। পরে ভিড় দেখে দিদিও খুব খুশি হন।’’
বুনিয়াদপুরের সভার পরে মালদহে রওনা দেন মমতা। পৌনে তিনটে নাগাদ পুরাতন মালদহের সূর্যাপুরের সভায় পৌঁছন। দলীয় সূত্রে খবর, সেই সভাতেও ভিড় দেখে খুশি হন দলনেত্রী। দুই সভাতেই আদিবাসী, রাজবংশী শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধামসা-মাদল, বাউল গান, নাচ দেখে মুগ্ধ হন তিনি। সভার শেষে হয় এনআরসি-বিরোধী গানও।